বগুড়ায় গভীর রাতে ওসি আঙ্কেলকে ফোন, ধরা পড়লো ভদ্রতার মুখোশে থাকা চোর

অপরাধ

মতিন খন্দকার টিটু :
ওসি আঙ্কেল, ওসি আঙ্কেল’ একজন দোকানের তালা ভাঙছে আপনি তাড়াতাড়ি আসেন মঙ্গলবার গভীর রাত আনুমানিক ২টা বাজে এমন একটি ফোন আসে বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ এস.এম বদিউজ্জামানের ফোনে। সাথে সাথেই ৫মিনিট আগে সেহরীর আগ পর্যন্ত সামান্য সময়ের জন্যে বিশ্রামে যাওয়া ওসি বদিউজ্জামান ওয়ারলেসে কল দিয়ে দ্রুততম সময়ে ফোনের অপাশ থেকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী শহরের শেরপুর রোডের স্থানীয় রেড চিলিস্ হোটেলের সামনে স্থানে টহলে থাকা পুলিশ সদস্যদের যেতে বলেন চোরকে ধরে দোকানে চুরি ঠেকানোর লক্ষ্যে।

চোর যখন তার চুরি করার সকল প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই সম্পন্ন করেছে তখন করোনা দুর্যোগের শুনশান রাতে হঠাৎ সে স্থানে উপস্থিত স্টেডিয়াম পুলিশ ফাঁড়ির টিএসআই জাহাঙ্গীর আলম এবং তার পরেই ওয়ারলেসে ডাক শুনে উপস্থিত ওসি (তদন্ত) রেজাউল করিম রেজাও। শুনশান রাস্তায় সেই দোকানের সামনে ঐ ব্যক্তি কি করে এমন নানা প্রশ্ন চলছে সন্দেহাতীত জিজ্ঞাসাবাদ হিসেবে এর মধ্যেই আবার সদর ওসি কাছে এলো ফোন, ‘ওসি আঙ্কেল, আপনার পুলিশ সদস্যরা যার সাথে কথা বলছে সেই চোর, উনাকে ধরতে বলেন’। ওসি সদর আবার ফোনের মাধ্যমে সেখানে থাকা পুলিশ সদস্যকে সেই চোরের ব্যাপারে নিশ্চিত করেন।

পরবর্তীতেই তাকে তল্লাশি শুরু করে উপস্থিত থাকা এসআই জাহিদুল ইসলাম বাহ তার কাছ থেকে বেরিয়ে এলো একগোছা নকল চাবি এবং তালা ভাঙ্গার সরঞ্জামাদী। বাস চোর যখন ধরা পরে গেলো জানা যায় তার নাম তানভীর হক উল্লাস (৩৮), শহরের সূত্রাপুর এলাকার বাসিন্দা সে। তবে সে নাকি পেটের দায়ে এই চুরি করছিল তবে এর পিছনেও রয়েছে একটি অবাক করা তথ্য তা হলো যে ওসি আঙ্কেল এর কাছে আসা ফোনে চোর তানভীর কে ধরা হলো, সেই ওসি সদর বদিউজ্জামানই গোপনে মাত্র ৩ দিন আগেই এই তানভীর এর খাবারের প্রয়োজন ফোনে গোপনে তার বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন পুরো এক সপ্তাহের খাদ্যসামগ্রী ভরা একটি ব্যাগ।

আপনার খাবার তো শেষ হয়নি তাহলে আপনি চুরি করছিলেন কেন পুলিশের এমন প্রশ্নে ভাষা হারিয়ে ফেলে ভদ্রলোকের লেবাস পড়া চোর তানভীর। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই তার বিরুদ্ধে এসআই জাহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে সদর থানায় চুরির উদ্দেশ্যে দোকানের তালা ভেঙ্গে অপরাধ করায় পেনাল কোড ৪৬১/৫১১ ধারায় একটি মামলা ঋজু হয়েছে এবং গ্রেফতার পরবর্তী বুধবার তাকে কোর্টেও প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান বুধবার নিজ ফেসবুক আইডিতে উক্ত ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা সদর থানার এসআই সোহেল রানা।

সোর্সের মতো প্রতিনিয়ত এমন ফোনের মাধ্যমে অপরাধকে রুখে দেওয়ার বিষয়ে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ এস.এম বদিউজ্জামান বলেন, সদর থানায় যোগদানের পরে নিয়মিত দাপ্তরিক কাজের ফাঁকে পুলিশ ভীতি কাটানো এবং জনবান্ধব পুলিশিং এর কার্যক্রম হিসেবে বিভিন্ন স্কুল কলেজে গিয়ে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সাথে সময় কাটাতেন তিনি। বর্তমানে সদরের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের ফোনে তার নম্বর সেভ করা আছে ‘ওসি আঙ্কেল’ নামে। অবাক করা বিষয় হচ্ছে তিনি তাদের সাথে সময় কাটিয়ে চলে আসলেও তারা কিন্তু তাদের আঙ্কেলকে ভোলেনা।

নিয়মিত ফোন করে তাকে এলাকাভিত্তিক নানা অপরাধ যেমন: ইভটিজিং, মাদক, চুরি, নারী ও শিশু নির্যাতন, বাল্যবিবাহের মতো নানা অপরাধের তথ্য দেয় যার মাধ্যমে এখন পর্যন্ত গতকালের চুরি আটকানোর মতো অনেক অপরাধ সংগঠিত হওয়ার পূর্বেই বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের এমন ভালবাসা নিয়ে সর্বদা তাদের ওসি আঙ্কেল হিসেবেই থাকার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে ভাল কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চান সদরের এই জনবান্ধব পুলিশ কর্মকর্তা এস. এম বদিউজ্জামান।

Leave a Reply

Your email address will not be published.