স্কুলপড়ুয়া ছেলেমেয়েদের মোবাইল আসক্তি : ভয়াবহর পথে গোটা বিশ্ব

জাতীয়

অনলাইন ডেস্ক :
শিশু-কিশোরদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে রক্ষা করার সময় এসেছে। মোবাইল তথা প্রযুক্তির অপব্যবহার থেকে তাদের বিরত রাখতে হবে। আচার-আচরণে তাদের প্রতি অভিভাবকদের আরও যত্নশীল হতে হবে। আমরা যত দ্রুত এ সত্য উপলব্ধি করব ততই মঙ্গল সভ্যতার উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তির অবদান অপূরণীয়। প্রযুক্তির ডানায় ভর করে পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে। নতুন নতুন আবিষ্কার সহজ করে দিচ্ছে জীবনযাত্রাকে। প্রযুক্তির উৎকর্ষের দরুন মোবাইল ফোন আজ যোগাযোগের দ্রুততম মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। গোটা বিশ্বকে এনে দিয়েছে হাতের মুঠোয়। কিন্তু প্রযুক্তির উপকারী একটি মাধ্যম যখন ক্ষতির কারণ হয়, তখন সেটা ভয়াবহ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। হাতের মুঠোয় থাকা ফোনটি আজ এমনই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মোবাইলের ‘ভয়ংকর’ ব্যবহারে আমাদের দেশের স্কুলপড়–য়ারা ‘সর্বনাশের’ চরম সীমায় চলে যাচ্ছে। প্রযুক্তির এ মাধ্যমটি ব্যবহার করে তারা বিনোদনের রঙিন আগুনে ঝাঁপ দিচ্ছে। কিছু না বুঝে ওঠার আগেই এ আগুনে পুড়িয়ে ফেলছে মূল্যবান সময় ও মেধা। নিজেকে ঠেলে দিচ্ছে এক অশুভ স্রোতের মাঝে।
বেসরকারি এক জরিপ অনুযায়ী, মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের মোবাইল আসক্তির পেছনে যে কারণগুলো উঠে আসছে এর মধ্যে অন্যতম হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার, ইউটিউবসহ বিভিন্ন রগরগে ওয়েবসাইটে সহজে প্রবেশ ও গেমস। এ আসক্তি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তা কি আমরা কখনও গভীরভাবে ভেবে দেখেছি? কেন কোমলমতি শিশু-কিশোররা মাদকের মতো মোবাইল আসক্তিতে জড়িয়ে পড়ছে? এজন্য কি শুধু তারাই দায়ী? নাকি এর পছনে অন্য কারণও আছে? এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার সময় এসেছে। একটু খেয়াল করলেই বিষয়গুলো সবার কাছে হাতের রেখার মতোই পরিষ্কার হয়ে যাবে। তার আগে দেখা যাক মোবাইল ব্যবহার মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের ওপর কোন ধরনের প্রভাব ফেলছে।
জরিপ অনুযায়ী, মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা মোবাইলে সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে। আর ফেসবুক হলো সামাজিক যোগাযোগের ইতিহাস বদলে দেয়ার অন্যতম মাধ্যম। সারা বিশ্বের সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে ফেসবুক। এছাড়া স্কাইপি, টুইটার, ফ্লিকার, মাইস্পেস ডায়াসপোরা, অরকুট প্রভৃতি মাধ্যমও সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। বিনা খরচে ফেসবুকের সদস্য হয়ে বন্ধু সংযোজন, বার্তা প্রেরণ এবং ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি ও ভিডিও আদান-প্রদান করা যায়। লগ-ইন অবস্থায় একজন অন্যজনের সঙ্গে চ্যাট করা, প্রফাইল দেখা, মেসেজ ও ছবি পাঠানো, ছবিতে মন্তব্য লেখা এবং প্রফাইলে ছবি যুক্ত করতে পারেন। সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে ফেসবুকের এ সুফল প্রতিদিন ভোগ করছেন বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। কিন্তু প্রযুক্তির উপকারী এ মাধ্যমটির ব্যবহার আমাদের শিশু-কিশোররা কীভাবে করছে দেখা যাক। জরিপ ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে আমাদের শিশু-কিশোরদের একটা বড় অংশই নিজের পায়ে নিজেরা কুড়াল মারছে। দিনের বেলায় তো আছেই তার ওপর রাত জেগে ফেসবুক, ইমু ইত্যাদির অপচর্চার মাধ্যমে নিজেদের শরীর মনকে বিকশিত করছে ভিন্নভাবে। বয়সের চেয়ে যৌন বিষয়ে বেশি পরিণত হয়ে যাচ্ছে। আড়ালে-আবডালে তারা এসবের চর্চাও করছে। পাশাপাশি লেখাপড়ারও বারটা বাজাচ্ছে। মাধ্যমিকের একজন শিক্ষার্থী যদি রাত ২টা-৩টা পর্যন্ত ফেসবুকে থাকে তাহলে বিষয়টি উদ্বেগের তো বটেই। জরিপ বলছে, এ ধরনের শিক্ষার্থী সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার করছে। রাত জেগে তাদের আড্ডার বড় অংশজুড়েই থাকে রগরগে কথাবার্তা। এ কথাবার্তার এক পর্যায়ে নিজেদের অজান্তেই তারা জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন ধরনের যৌন কর্মকাণ্ডে। বন্ধুদের মাঝে বিনিময় করছে নুড ছবি বা ভিডিও। এক পর্যায়ে স্কুল কিংবা কোচিং ফাঁকি দিয়ে লিপ্ত হচ্ছে বাসনা পূরণে। আর এভাবেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার করে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা নিজেদের সর্বনাশ করছে।
শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নয়; মোবাইলের মাধ্যমে রগরগে ওয়েবসাইটেও সহজে প্রবেশ করছে এ বয়সের শিক্ষার্থীরা। একটি বেসরকারি সংস্থার জরিপে দেখা গেছে, মোবাইল ব্যবহারকারী শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশই এর মাধ্যমে পর্নো দেখে। অনেক সময় এতে আসক্ত হয়ে নিজেরাই নিজেদের নুড ছবি বা ভিডিও ধারণ করে বন্ধুদের সঙ্গে বিনিময় করে। এরপর কখনও বন্ধুত্বের ফাটল ধরলে এ ভিডিও বা ছবিগুলো ইন্টারটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়। এর সত্যতা পাওয়া যায় সম্প্রতি দ্য ইনডিপেনডেন্টের অনলাইনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, অনলাইনে পর্নোগ্রাফি অবাধ হওয়ায় স্কুলের গণ্ডি পেরোনোর আগেই শিক্ষার্থীরা ভয়াবহ এ নেশায় আক্রান্ত হচ্ছে। এ বিষয়ে দেড় হাজারেরও বেশি শিক্ষকের ওপর জরিপ চালানো হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের এমন আচরণ সম্পর্কে জানেন দুই-তৃতীয়াংশ বা শতকরা প্রায় ৬২ ভাগ শিক্ষক। তারা বলেছেন, অনলাইন থেকে যৌনতায় আসক্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতি ছয়জনের একজন হলো প্রাথমিক স্কুলপড়–য়া বয়সী। যেসব শিক্ষার্থী মোবাইল ফোন ব্যবহার করে, তাদের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষকরা। তারা বলেছেন, মোবাইল ফোন ব্যবহার করে এসব শিক্ষার্থী নিজেদের নগ্ন ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে দিচ্ছে। যেসব শিক্ষার্থী নরম মনের, শান্তশিষ্ট তাদের এসব ছবি পাঠিয়ে নানাভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে, তাদের যৌন হয়রানি করার জন্য এসএমএস দিচ্ছে। শুধু তা-ই নয়; শিক্ষকরা বলেছেন, ক্লাসের পড়া চলাকালীনও কিছু শিক্ষার্থী মোবাইল ফোন ব্যবহার করে যৌন কর্মকাণ্ড চালায়। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে তারা এসব অপকর্ম করছে। কিছু শিক্ষার্থী নিজেদের জন্য একটি গ্রুপ তৈরি করেছে। একজন শিক্ষক বলেছেন, ওই গ্রুপের সদস্যরা অন্য শিক্ষার্থীর ‘রেটেড’ ছবি গোপনে তুলে তা প্রকাশ করে দিচ্ছে সেই গ্রুপে। আরেকজন শিক্ষক বলেছেন, আরেকটি গ্রুপ একটি ভুয়া পেজ চালু করেছে। এটা ব্যবহার করে অন্য শিক্ষার্থীদের তাদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। উৎসাহিত করা হচ্ছে তারাও যেন তাদের নগ্ন ছবি তুলে তা ওই পেজে পোস্ট করে। এভাবে একে অন্যের কাছে নগ্ন ছবি বিনিময় করে। তারপর তা চলে যায় রগরগে সব ওয়েবসাইটে। শিশুদের দাতব্য সেবদানকারী প্রতিষ্ঠান বার্নাডো এ ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করেছে। এর প্রধান নির্বাহী জাভেদ খান বলেছেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, অনলাইন পর্নোগ্রাফি ও অন্য ক্ষতিকর অনলাইন শিশুদের মাথা বিকৃত করে তাদের বিপথে পরিচালিত করতে পারে। এতে তাদের শারীরিক সম্পর্ক, তাদের স্বাস্থ্যগত সম্পর্ক ও অন্যান্য ধারণাই পাল্টে যাবে।’ 
বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন আমাদের শিক্ষকরা, তারাও এর প্রতিকার চাচ্ছেন। গেল বছর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে একটি সম্মেলন করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। এতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের বর্তমান চিত্র ও ভয়াবহতা তুলে ধরে মানিকগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ইদ্রিস আলী আজিজীসহ অন্য শিক্ষকরা বক্তব্য দেন। তারা বলেন, মোবাইল ফোনের পাশাপাশি ফেসবুকেও আসক্তি বাড়ছে ছাত্রছাত্রীদের। এগুলো শিক্ষার ওপর বিরূপ ও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। মোবাইল ফোন ব্যবহার স্কুলশিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় কেমন নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, তা নিয়ে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের রিচার্ড মারফি ও লুইস-ফিলিপ বেলান্ড গবেষণা করেন। তারা গবেষণার জন্য ৯১টি ব্রিটিশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১ লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর পরীক্ষার ফল পর্যবেক্ষণ করেন। মোবাইল ফোন ব্যবহার সম্পর্কে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন নিয়ম আছে, যার সঙ্গে ১৬ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফল তুলনা করে দেখা হয়। তাদের মতে, মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করায় শিক্ষার্থীদের ওপর যে প্রভাব পড়েছে, তা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন বাড়তি এক ঘণ্টা সময় দেয়া অথবা ক্লাসের দিন একদিন বাড়ানোর সমান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ করায় শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার নম্বর শতকরা ৬.৪ ভাগ বেড়েছে। এছাড়া যেসব শিক্ষার্থীর পরীক্ষার ফল খুব বেশি ভালো নয়, তাদের ক্ষেত্রে নম্বর বেড়েছে ১৪ শতাংশ।
জনপ্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, শিক্ষকরাও শিক্ষার্থীদের মোবাইল ব্যবহারের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে বারবার সতর্ক করছেন। জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেছেন, মাদকের মতো স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বর্তমানে মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়ে পড়েছে। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ও সুশৃঙ্খল জাতি গঠনে সর্বস্তরের মানুষকে অপ্রাপ্ত বয়সী শিক্ষার্থীদের হাতে মোবাইল ফোন না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের মেধাকে ধ্বংস করছে, অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছে বলে তিনি মত দেন। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, ‘ইদানীং ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে মোবাইল ফোনের নেশা তৈরি হয়েছে। মোবাইল ফোনের অপব্যবহার ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়ছে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে। এ অপব্যবহারের কারণে ছাত্ররা ইভটিজিং, বখাটেপনাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। পড়াশোনা বাদ দিয়ে তারা গভীর রাতে ফোনালাপে ব্যস্ত থাকছে।’ এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে তিনি অভিভাবকদের অনুরোধ জানান। শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক ড. জাফর ইকবাল বরাবরই ছাত্রছাত্রীদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে কথা বলছেন। ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতি অতিমাত্রায় ঝুঁকে পড়ায় ছাত্রছাত্রীরা লেখাপড়ায় অমনোযোগী হয়ে পড়ছে বলে মনে করেন এ শিক্ষাবিদ। 
মোবাইল আসক্তি যে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা বা নৈতিক স্খলন ঘটাচ্ছে শুধু তাই নয়; তাদের মানসিক ও স্বাস্থ্যের ওপরও যথেষ্ট প্রভাব ফেলছে। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, মোবাইলে আসক্ত শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ হচ্ছে অন্যভাবে। তাদের চিন্তাজুড়ে থাকছে ফেসবুক, ইমু, ভাইভার, স্কাইপের আবেগ অথবা গেমসের নানা চরিত্র। এ ধরনের আসক্তিতে জড়িয়ে একদিকে যেমন তাদের নৈতিক অবক্ষয় হচ্ছে, অন্যদিকে নানা ধরনের গেমসের চরিত্রে নিজেকে আবিষ্কার করতে গিয়ে জড়াচ্ছে অপরাধে; এমনকি প্রাণও বিসর্জন দিচ্ছে। ব্লু হোয়েল গেমসটি এর অন্যতম উদাহরণ। এজন্য প্রতিটি মা-বাবার উচিত শিশুদের প্রযুক্তির হাতে ছেড়ে না দিয়ে পর্যাপ্ত দেখাশোনা করা, তাদের সঙ্গে সময় কাটানো, গঠনশীল আলোচনা করা। 
স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মোবাইল ব্যবহারের ব্যাপারে নড়েচড়ে বসছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও। একটি জাতীয় পত্রিকার তথ্যানুযায়ী এ ব্যাপারে মতামত নিতে মন্ত্রণালয় থেকে একটি আদেশও জারি করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, রাতভর বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কথা বলে ছাত্রছাত্রীরা বিপথে যেতে বসেছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে আজেবাজে ছবিও দেখছে তারা। বিষয়গুলোর প্রতি সরকারের নজর দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিত করতে বলা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, ছাত্রছাত্রীদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের করণীয় নির্ধারণের বিষয়ে মতামত দেয়ার জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে। তাদের মতামত পাওয়ার পরই নিষেধাজ্ঞা জারির আদেশ ঘোষণা করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর শ্রেণিকক্ষে মোবাইল ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। 
শিক্ষার্থীদের, বিশেষ করে স্কুলপড়ুয়াদের মোবাইলের অপব্যবহারের জন্য মূলত কারা দায়ী, সে দিকটিও আলোচনা করা প্রয়োজন। এককথায় বলা যেতে পারে, এজন্য শিশু-কিশোররা যতটা দায়ী তার চেয়ে বেশি দায়ী অভিভাবকরা। কারণ তারা প্রয়োজনের তাগিদেই হোক অথবা অতিরিক্ত স্মার্ট বানাতেই হোক সন্তানদের হাতে স্মার্টফোন তুলে দিয়েই দায় সারছেন। তারা কখনও খোঁজ রাখছেন না তাদের সন্তানরা এ ফোনটির সঠিক ব্যবহার করছে কিনা। আমাদের মনে রাখতে হবে, শিশু-কিশোরদের সামনে আজ প্রযুক্তির অনেক মাধ্যম আগ্রাসনের হাতছানি দিচ্ছে। তারা নিজেদের অজান্তেই তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার করে মেধা-চরিত্রের বারোটা বাজাচ্ছে। আবেগের ওপর ভর করে চলা শিশু-কিশোররা প্রযুক্তির ভালোমন্দ সম্পর্কে অনেক কিছুই জানে না। তারা জানে না একটি ভুলই সারা জীবনের কান্না হতে পারে। তাই প্রযুক্তির আগ্রাসনের করাল গ্রাস থেকে রক্ষার জন্য এ বিষয়গুলো নিয়ে তাদের পরিষ্কার করে বোঝাতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে, বাস্তবে তামিল সিনেমার নায়ক-নায়িকা হওয়া সম্ভব নয়। আজ যদি বিষয়টি আমরা আমলে না নিই, তাহলে আগামীতে এ সমস্যা আরও প্রকট হবে, যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। অথচ এর সব দায় কিন্তু আমাদের। কারণ সন্তান কী করে, কোথায় যায়, কীভাবে সময় কাটায়- এসব তদারকি মা-বাবা তথা অভিভাবকদেরই করতে হবে। তাছাড়া সন্তানরা যা চাইবে, সেটার সুবিধা-অসুবিধা ভেবে দেখতে হবে অভিভাবকদের। তাদের লেখাপড়া, মনমানসিকতার ক্ষতি হয়, এমন সব কাজ থেকে তাদের বিরত রাখাতে হবে। বিশেষ করে মাকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। কারণ সন্তানকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার নিখুঁত কারিগর তার মা। এক্ষেত্রে বাবাকে মায়ের সহযোগী হিসেবে কাজ করতে হবে। কিন্তু কিছু মা-বাবার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা ও অসচেতনতার কারণে সম্ভাবনাময় সন্তানরাও বিপথগামী হচ্ছে। শিশু-কিশোরদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে রক্ষা করার সময় এসেছে। মোবাইল তথা প্রযুক্তির অপব্যবহার থেকে তাদের বিরত রাখতে হবে। আচার-আচরণে তাদের প্রতি অভিভাবকদের আরও যত্নশীল হতে হবে। আমরা যত দ্রুত এ সত্য উপলব্ধি করব ততই মঙ্গল। 

রিপোর্টার  সাংবাদিক,শফিক বাশার 

Leave a Reply

Your email address will not be published.