রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ , এক উক্তি : আমি ইউক্রেনের জনগনের কান্না দেখে মোটেই বিচলিত নই,কারন….

অন্যান্য

জিএম জাহিদ হোসেন টিপু :
একটি স্বাধীন দেশ ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার আক্রমনের বেশ কয়দিন হতে চললো ,সেখানে নারী-শিশু-নিরস্ত্র জনতার উপর হামলা চলছে , দশ লক্ষেরও বেশী নিরীহ মানুষ প্রাণবাঁচাতে পার্শ্ববর্তী দেশে আশ্রয় নিয়েছে ৷ এতদশর্তেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের একটি যৌক্তিক ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া হলো ” আমি ইউক্রেনের জনগনের কান্না দেখে মোটেই বিচলিত নই , কারন আমি ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ইরাক লিবিয়া আফগানিস্তানের নারী-শিশু -বৃদ্ধের বিবস্ত্র কান্না দেখে অভ্যস্ত ” ৷ এটি জাতিসংঘ, নেটো, ইউরোপ- আমেরিকার প্রতি একটি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ৷ এই প্রতিক্রিয়া শতভাগ সঠিক ৷ তাছাড়া রাশিয়া ৭১ সালে আমাদের মিত্র ছিলো ৷ তখন ইউক্রেন সোভিয়েত রাশিয়ার অন্তর্ভূক্ত ছিলো ৷ তখন ভারতও আমাদের মিত্র ছিলো ৷ তাই বলে চোখ বন্ধকরে তাদের সকল কিছুকে তো আমরা সমর্থন করিনা ৷ বিশ্বরাজনীতির মোড়লদের আধীপত্যবাদের খেসারত যুগযুগ ধরে ছোট দেশ গুলোকে এবং নিরস্ত্র জনতাকে দিতে হয়েছে , মানবতা হয়েছে ভূলুন্ঠিত ৷ পৃথিবী যতদিন থাকবে ততদিন মোড়লদের আধীপত্যবাদী আগ্রাসন চলতেই থাকবে , শুধু বদলাবে গতিপ্রকৃতি ৷কোন ধর্মই এমন অন্যায় বর্বর হত্যাযজ্ঞকে সমর্থন করেনা ৷ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভূক্ত দেশ ইউক্রেন বর্তমানে পুর্ব ইউরোপের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ৷ কৃষি এবং শিল্পোন্নত সাড়ে ৪ কোটি জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত ইউক্রেন ১৯৯১ সালে একটি গনভোটের মাধ্যমে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে , এতেই সূচীত হয় সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙ্গন প্রকৃয়া ৷ এর পুর্বে ১৯৮৬ সালে মিখাইল গর্ভাচেভ কমিউনিষ্ট সোভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর কমিউনিজমের বদ্ধ খাঁচা থেকে জনগনকে রের করে কিছুটা বাক স্বাধীনতা দেয়ার লক্ষে “গ্লাসনস্ত ও পেরেস্ত্রইকা” নামক একটি সংস্কার কর্মসূচী হাতে নেন ৷ এর লক্ষ্য ছিলো সোভিয়েত ইউনিয়নের ভঙ্গুর অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য চীনের আদলে ক্যাপিটেলিজম ও সোসালিজমের সমম্বয়ে একটি উন্নত অর্থনৈতিক রাষ্ট্রগঠন করা ৷ কিন্ত গর্ভাচেভের এই নীতি সোভিয়েত ইউনিয়নকে পূনরুজ্জীবিত করার পরিবর্তে ভেঙ্গে খানখান করে দেয় ৷ ফলে সৃষ্টি হয় ১৫ টি স্বাধীন রাষ্ট্র , ইউক্রেন তারই একটি ৷ সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে যুক্ত থাকার সময় এখানে প্রচুর পারমানবিক অস্ত্রের স্থাপনা থাকায় ইউক্রেন বর্তমানে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তর পারমানবিক অস্ত্রভান্ডারের দেশে পরিনত হয় ৷ তাই ইউক্রেন রাশিয়া আমেরিকার লক্ষ্যবস্ততে পরিনত হয় ৷ ইউক্রেন আমেরিকার নেতৃত্বাধীন নেটোভূক্ত হওয়ার চেষ্টা করলে আমেরিকা রাশিয়ার বলয়ে প্রবেশে সহজ হয়ে উঠবে এবং রাশিয়ার নিরাপত্তা চরমভাবে বিঘ্নিত হতে পারে এই আশঙ্কায় এবং আরো নানাবিধ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে রাশিয়া ইউক্রেন দখলের যুদ্ধে নামে ৷ পুতিন এই যুদ্ধে সফল হলে রাশিয়া তাদের হাত ছাড়া ১৫ রাষ্ট্র পূণরোত্রীকরনের পথ সুগম হবে ৷ যে কারনেই হোক একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের উপর রাশিয়ার দখলদারিত্ব কি সমর্থন যোগ্য ? এমন চলতে থাকলে পৃথিবীর ভবিষ্যত কি ? আমাদেরই বা ভবিষ্যত কি ? করোনার অজুহাতে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতীর করাল গ্রাসে এমনিতেই আমরা নাকাল ৷ চলমান যুদ্ধের অজুহাতে আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতী মোকাবেলার যুদ্ধে আমরা অবর্তীর্ণ ৷ ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধে আমরা কি আরেকটি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বা পারমানবিক যুদ্ধের দিকে এগুচ্ছি ? মানবতা যেই দেশেরই হোক আর যেই ধর্মেরই হোক ইসলাম কোন মানবতার বিপর্যয়ই সমর্থন করেনা ৷ বন্ধ হোক যুদ্ধ , প্রতিষ্ঠিত হোক শান্তি , এটাই বিশ্ব মানবতার প্রত্যাশা ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published.