বগুড়ায় দেড় বছরের শিশুকে পিটিয়ে হত্যা : প্রচার করা হচ্ছে জিন এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে

অপরাধ

বগুড়া প্রতিনিধি :
বগুড়ার কাহালু উপজেলায় জমিজমা বিরোধের জেরে সাবা মনি নামের এক বছর ছয়মাস বয়সী শিশুকে হত্যার পর জিনের কাণ্ড বলে প্রচারের অভিযোগ উঠেছে চাচার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় পুড়ো এলাকাজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয় নিহতের আপন বড় বোন জেরিন আক্তার (৯)। তাকে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত জেরিন চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী। নিহত সাবা মনি ও আহত জেরিন আক্তার কাহালু উপজেলার দামাই গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনের মেয়ে।

নিহত সাবার বাবা জাহাঙ্গীর জানান, গত শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে তার বড় মেয়ে জেরিন ও ছোট মেয়ে সাবা প্রতিবেশী হাফিজার রহমানের বরইগাছের নিচে বরই কুড়াতে গেলে আমার চাচাতো ভাই রেজওয়ান তাদেরকে বেদম মারধর করে। একপর্যায়ে আমার ছোট মেয়ে সাবা ঘটনাস্থলেই মারা যায়। বড় মেয়ে জেরিনকেও হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে রেজওয়ান। সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে জেরিন। ঘটনার কিছুক্ষণ পর প্রতিবেশী হাফিজার রহমানের কাছে খবর পেয়ে দ্রুত ছুটে গিয়ে দেখি জেরিন অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে আর সাবা মনি মারা গেছে। মেয়ের মৃত্যু দেখে আমিও জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। স্থানীয়রা আহত জেরিনকে উদ্ধার করে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। তিনি আরো জানান গত এক বছর আগে অভিযুক্ত রেজওয়ানের সঙ্গে জমিজমা সংক্রান্ত একটি বিষয় নিয়ে ঝামেলা চলছিল আমার।

এদিকে নিহতের স্বজনদের দাবি পুলিশকে না জানিয়ে সাবার মরদেহ ঐ রাতেই দাফন করে অভিযুক্তরা। এবং এ হত্যাকান্ডকে জিনের কাণ্ড বলে এলাকায় প্রচার চালায় তারা। নিহত সাবার জানাজা নামাজ ও দাফনের সময় শতশত মানুষ উপস্থিত হলেও সেখানে রেজওয়ানকে দেখা যায়নি। জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরেই তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাদের অভিযোগ।

ঘটনার তিনদিন পর গত সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে হাসপাতালে জ্ঞান ফিরে আসে আহত জেরিনের। সে জানায়, এটি জিনের কান্ড নয়, এটা হত্যাকাণ্ড, তখনই বেরিয়ে আসে আসল রহস্য। বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সাংবাদিকদের নিজ মুখে ঘটনার সত্যতা খুলে বলে জেরিন। সে বলে তার চাচা রেজওয়ান চাচ্চু লাঠি দিয়ে আঘাত করে আমার বোন সাবাকে মেরে ফেলেছে। আমি এগিয়ে গেলে আমাকেও লাঠি দিয়ে আঘাত করে। আমি জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে যাই, আর কিছু বলতে পারিনা।

নিহত সাবার মা কান্না জড়িত কণ্ঠে বলতে থাকেন আমার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। আমি রেজওয়ানের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি “ফাঁসির” দাবি করছি।

সাবার ফুফা মান্নান বলেন, ভূতের কাণ্ড বলে প্রচার চালানোর পাশাপাশি আব্দুল আলীম নামের এক হুজুরের কাছ থেকে একটি কাগজ নিয়ে এসেছেন রেজওয়ানের ভাই নূরুল ইসলাম। সেই কাগজে লেখা আছে, বদমেজাজি জিন সাবাকে হত্যা করেছে। ওই জিন থেকে বাঁচতে হলে পাঁচ হাজার পাঁচশ টাকা লাগবে। (কবিরাজ) হুজুর আব্দুল আলীম শহরের কামারগাড়ী এলাকায় ‘লাখো দাওয়া এক দোয়া চিকিৎসালয়’ নামে একটি দোকান চালান।

জানতে চাইলে (কবিরাজ) হুজুর আব্দুল আলীম বলেন, নুরুল ইসলাম আমার কাছে আসার পর তার কথা শুনে বুঝতে পারি ওটা বদ জিন। আমি তাকে আমার প্যাডে লিখে দিই, বদ জিনকে বন্দি করতে পাঁচ হাজার পাঁচশত টাকা লাগবে।

মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টার পর বাড়িতে গিয়েও নুরুল ইসলাম ও তার ভাই রেজওয়ানকে পাওয়া যায়নি। তাদের বড় ভাই রুহুল আমিন বলেন, “জিনই সাবাকে হত্যা করেছে। এঘটনায় আমার ভাই জড়িত না। তিনি বলেন এর ১০ দিন আগে ঐ গ্রামে আতাউর নামে একজনকে গাছ কাটতে স্বপ্নে মানা করে জিন। কথা না শোনায় জিন তাকে হত্যা করে। আতাউরের মৃত্যুর কুলকার্নি (মজলিস) খেয়ে ফেরার পথে সাবাকে হত্যা করে জিন। আমার ভাই রেজওয়ান এই হত্যার সঙ্গে জড়িত না। কবিরাজ আব্দুল আলীমও জিনের কথা বলেছেন।

কাহালু থানার (ওসি) আম্বার হোসেন জানান, দেড় বছর বয়সী শিশুটিকে হত্যার অভিযোগ নিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় থানায় এসেছেন তার স্বজনরা। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.