নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে কিশোর গ্যাং এখন আতঙ্কের নাম

অপরাধ

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি :
রূপগঞ্জে কিশোর গ্যাং একটি আতঙ্কের নাম। কিশোর গ্যাং বর্তমানে সমাজের একটি বড় সমস্যা। অভিযোগ উঠেছে সমাজের একটি প্রভাবশালী মহল এই কিশোর গ্যাং এর সেন্টার দাতা হিসেবে কাজ করায় এই কিশোর গ্যাং এর সদস্যরা এত বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

রূপগঞ্জের সারা উপজেলা জুড়ে নামে বেনামে গড়ে উঠা ৪০টির মত সংগঠনের অনেকেই স্কুল কলেজের গন্ডিও পার হয়নি।
প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের কারণে কিশোর গ্যাঙ্গের কিছু সদস্য ছড়িয়ে ছিটে যাওয়ায় অনেক কিশোর গ্যাং এখন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে আবার অনেকে সক্রিয় থেকে গ্যাং পরিবর্তন করে কাজ করছে। বর্তমানে উপজেলা জুড়ে নামে বেনামে ২১ টির মত কিশোর গ্যাং সক্রিয় আছে।

বিভিন্ন ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রভাবশালী একটি মহল এই কিশোর গ্যাং ব্যবহার করে ঐ সকল এলাকায় জমি দখলসহ আধিপত্য বিস্তার করে আসছে।

সচেতন মহল মনে করেন এই কিশোর গ্যাং বন্ধ করতে হলে প্রথমে কিশোর গ্যাং দাতাদের আগে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। তাহলে কিশোর গ্যাং বন্ধ করতে হবে না কিশোর এমনিই বন্ধ হয়ে যাবে। তারা আরো বলেন সরকারের অনেক সংস্থা আছে যারা গোপনে এ সকল কিশোর গ্যাং এর সেন্টার দাতা হিসেবে কাজ করছে তাদের তালিকা খুঁজে বের করা। তাদের ধারণা যে সমস্ত অফিসার এদের খুঁজে বের করবে তারাই সে সকল সেলটার দাতাদের হয়ে কাজ করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রূপগঞ্জে ২১টি গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে হাটাব টেকপাড়া এলাকার সাব্বির গ্যাং, কিং মাস্টার, ডি কোম্পানি, টাইগার গ্যাং,টেনশন গ্যাং, ডেঞ্জার গ্রুপ, সুইচ গ্রুপ, স্যাভেজ গ্রুপ, কুড়াল গ্রুপ, পিনিক গ্যাং, হাতুড়ি গ্যাং, সজীব গ্যাং, আমির গ্যাং, ইভান গ্যাং, পাটানী গ্যাং, আলেক্স গ্রুপ, সেভেন স্টার গ্রুপ, ইয়াং স্টার, কসাই গ্যাং, লাদেন গ্যাং ও বাবা গ্যাংসহ নানা গ্রুপ।

যে বয়সে কিশোরদের স্কুল কলেজে যাবার কথা, খেলার মাঠে থাকার কথা, বিভিন্ন সৃজনশীল কাজের মধ্যে দিয়ে প্রতিভা বিকাশের পথে এগিয়ে যাওয়ার কথা, সেই বয়সে কিশোররা এখন ছুরি-চাকু এমনকি আগ্নেয়াশ্র হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, মাস্তানি করে, চাঁদাবাজি করে। সব সময় তারা মাদকের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে। রাস্তাঘাটে ছিনতাই করা, মেয়েদের উত্তপ্ত করা, মহল্লায় নুতন ভাড়াটিয়া দেখলেই বিভিন্ন কৌশলে তাদের কাছ থেকে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়ার পাশাপাশি বাসার ভিতরে গিয়ে করা হয় হেনস্থা, তাদের ভাষায় যাকে বলে “ফিটিং” দেয়া। শুধু তাই নয় , রাস্তার মোড়ে মোড়ে দিনভরই চলে তাদের আড্ডা, নারীদের দেখে করা হয় অশালীন মন্তব্য, আবার আদিপত্য বিস্তারের জেরে নিজেদের মধ্যে মারামারি এমনকি খুনের ঘটনাও ঘটে অহরহ,পাড়া মহল্লায় কিশোর যুবক গ্যাংগুলো এভাবেই ভয়ংকর হয়ে ওঠছে দিনকে দিন।

রূপগঞ্জ উপজেলার প্রতিটি জনপদে বর্তমান সময়ে অনেকটা ফিল্মিস্টাইলে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে উঠতি বয়সের বিপদগামী এসকল কিশোরের গ্যাং। দিবারাত্রি তারা মাদক বেচাকেনা, সেবন, ডিজে পার্টি ও চুরি, ছিনতাই নিয়ে ব্যস্ত থাকে এই গ্যাংয়ের কিশোররা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা দলবেঁধে দিনের বেশিরভাগ সময় গার্মেন্টস চলাকালিন লাঞ্চের সময় এবং স্কুল-কলেজের সামনে কারণে অকারণে সময় কাটাচ্ছে। সুযোগ বুঝে গ্যাংয়ের সদস্যরা স্কুল-কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও গার্মেন্টস কর্মী নারীদের উত্ত্যক্ত করছে।
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সরকার বলেন, কিশোর গ্যাং অনেকটা কমে গেছে। বেশ কিছু অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। আরও অভিযান পরিচালনা করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.