তিন বছর ধরে পড়ে আছে কোটি টাকার অ্যাম্বুলেন্স

অন্যান্য

মোঃ রাজু মিয়া – রংপুর থেকে :
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গ্যারেজে গত তিন বছরের বেশি সময় ধরে পড়ে আছে অত্যাধুনিক কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্স টি।
শুধু নীতিমালা না হওয়া ও চিকিৎসকের অভাবে আইসিইউ সাপোর্ট সংবলিত অ্যাম্বুলেন্সের সেবা মিলছে না।
এজন্য অনেক সময় প্রাণহানির ঝুঁকিতে পড়ছে মুমূর্ষু রোগীরা।
তবে অ্যাম্বুলেন্সটি সচল রাখতে মাঝে মাঝে চালানো হচ্ছে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা।

রমেক হাসপাতালের নতুন ও পুরোনো কার্ডিয়াক (সিসিইউ) ওয়ার্ডে শয্যা রয়েছে ৪৮টি।
এর বিপরীতে রোগী ভর্তি থাকে দ্বিগুণেরও বেশি। আবার খুব গরম ও শীতে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত রোগীর ভর্তি বেড়ে যায়।
হঠাৎ হৃদ রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে কারো অবস্থা গুরুতর হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত অন্যত্র নিয়ে যেতে হয়।
এ ছাড়া আইসিইউতে শয্যা রয়েছে মাত্র ১০টি। অনেক সময় শয্যা না পাওয়া মুমূর্ষু রোগীকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হয়।
রংপুর ও এর আশপাশে কোনো মুমূর্ষু রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র নিতে হলে কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্সই বিকল্প ব্যবস্থা।
কিন্তু তিন বছরের বেশি সময় পরও শুধু নীতিমালার অভাবে অ্যাম্বুলেন্সটি চালু করা সম্ভব হয়নি।
রমেক হাসপাতালের প্রশাসনিক দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১৯ জানুয়ারি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে কোটি টাকার অধিক মূল্যের ইতালির তৈরি আইসিইউর সব সুবিধাসংবলিত অত্যাধুনিক কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্সটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়।
যাতে রংপুর অঞ্চলের মুমূর্ষু রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সেই সাপোর্ট দেওয়া সম্ভব হয়।

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে উন্নত প্রযুক্তির পালস অক্সিমিটার, ইসিজি মেশিন, সিরিঞ্জ পাম্প, ভেন্টিলেটর মেশিন, সাকার মেশিন, মনিটর, অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ জীবন রক্ষাকারী সব যন্ত্রপাতি রয়েছে।
তবে এটি রোগীর জন্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে চালক ছাড়াও একজন করে প্রশিক্ষিত চিকিৎসক, নার্স ও ওয়ার্ড বয় থাকতে হবে।
নয়তো এটি ব্যবহার উপযোগী করে রোগীকে কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রদান করা যাবে না।
হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স শাখার এক কর্মচারী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনি বলেন অ্যাম্বুলেন্স টি পাওয়ার পর থেকেই এটি গ্যারেজে আছে।
যাতে সচল থাকে এজন্য মাঝে মাঝে ইঞ্জিন স্টার্ট করা হয়।
কবে চালু হবে তা তিনি জানাতে পারেননি।

যেখানে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত রোগীর চাপ বাড়ছে, রয়েছে মৃত্যুর ঘটনাও।
সেখানে উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীকে দ্রুত সময়ের অন্যত্র নিয়ে যেতে কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্সটি কারো কারো জন্য খুবই জরুরি।
নয়তো রোগী বহনে যেমন চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে তেমনি জীবনের ঝুঁকিও বাড়ছে।
এ কারণে কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্সটি গ্যারেজে তালাবন্দী না রেখে রোগীর সেবায় এটি চালু করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন সচেতন মহলসহ রোগী ও তাদের স্বজনেরা।

সম্প্রতি হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে রমেক হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন মিজানুর রহমান নামের এক সাংবাদিক।
পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হয় বর্তমানে তিনি সুস্থ রয়েছে।
এই সাংবাদিক বলেন, সংকটাপন্ন একজন রোগীকে দ্রুত অন্যত্র নিয়ে যেতে সরকার কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্সটি হাসপাতালে দিয়েছে।

কিন্তু লোকবলের অভাবের অযুহাত দিয়ে মূল্যবান এই অ্যাম্বুলেন্সটি গ্যারেজে ফেলে রাখা হয়েছে।

অথচ এটি চালু হলে নিম্ন ও মধ্য আয়ের পরিবার বেশি উপকৃত হবে।
কারণ এই অ্যাম্বুলেন্স সেবা মিলছে না বলে অনেকেই বেশি খরচে বাইরের পরিবহন ব্যবহার করে অন্যত্র যাচ্ছেন।
জনস্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক বেলাল হোসেন বলেন, এ অঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থা খুবই খারাপ।
উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার মতো অর্থ থাকে না স্বজনের।
কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্সটি চালু হলে তারা উপকৃত হবেন।
আকস্মিক হার্টের সমস্যার কারণে কারও অবস্থা গুরুতরও হলেও দ্রুত তাকে কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, রমেক হাসপাতালে আইসিইউতে শয্যা আছে মাত্র ১০টি।
উপরন্তু মাঝে মাঝে দুয়েকটি শয্যা খারাপ হয়ে যায়।
তাই শয্যা না পাওয়া মুমূর্ষু রোগীকে অন্যত্র নিতেও খরচ বাড়ছে স্বজনের।

বাংলাদেশ প্রাইভেট হসপিটাল, ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন রংপুর বিভাগ ও জেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মামুনুর রহমান বলেন, শুধু নীতিমালার কারণে তিন বছরের বেশি সময় রোগীরা কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্স সেবাবঞ্চিত থাকবে, এটা দুঃখজনক।

তবে অনেক সময় রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
সেক্ষেত্রে অ্যাম্বুলেন্সে থাকা চিকিৎসকের নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা.সৈয়দ মামুনুর রহমান বলেন, অনেক স্থানে চিকিৎসকের উপস্থিতিতে মুমূর্ষু রোগী পরিবহন করা হচ্ছে।

কিন্তু সেখানে তো বিষয়টি উঠছে না। তিনি মনে করেন, এ বিষয়ে আইন আছে।
সেটি যথাযথ মেনে এবং রোগীর স্বজনদের আগে থেকে কাউন্সেলিং করলে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না।
তার পরও যারা নিরাপত্তার কথা বলেন, এটি এক ধরনের অজুহাত বলে তিনি মনে করেন।

এ বিষয়ে রমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইউনুস আলী বলেন,লোকবল ও নীতিমালা না থাকায় কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্সটির পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও মাঝে মাঝে অ্যাম্বুলেন্সটির সার্ভিস অব্যাহত আছে।
নীতিমালা করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জানানো হয়েছে।
পাশাপাশি অ্যাম্বুলেন্সটি টেবিল অব অর্গানাইজেশন অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট তালিকাভুক্ত করার জন্য কাজ করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে রমেক হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এবং জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, শুনেছি লোকবলের অভাবে কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্সটি চালু করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।
তবে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সটি চালু করার জন্য সংশ্লিষ্টেদের সঙ্গে কথা বলে সাধ্যের মধ্যে যা করা দরকার তা করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.