কুমিল্লা – ৬ (সদর) আসনে প্রচারে নৌকা এগিয়ে থাকলেও ভোটারদের ভাষ্য মার্কা নয় প্রার্থী দেখবো

রাজনীতি

নির্বাচনী আচরণ বিধি ভঙ্গের দায়ে বাহারকে ১ লাখ টাকা জরিমানা সীমাকে ভুড়িভোজে শোকজ

এম শাহীন আলম :
কুমিল্লা আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে গত কয়েক যুগ ধরে বাহার এবং আফজাল খান এই দুটি পরিবারের মধ্যে প্রকাশ্যে চরম রাজনৈতিক বিভেদ বিরাজমান,এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি এই দুই পরিবারের রাজনীতির মাঠে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় জমে উঠেছে নৌকা এবং ঈগলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। সরেজমিনে নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে তাদের মুখের অভিব্যক্ত এবং অনুভূতিতে যে আবাস পাওয়া যাচ্ছে তাতে করে দেখা যায় প্রচার প্রচারণায় বাহার এর নৌকা এগিয়ে থাকলেও নিরব ভোটের মাঠে সীমার ঈগলের ভয়াল থাবার আংশকা ক্রমেই বাড়ছে।

আগামী ৭ জানুয়ারী -২০২৪ তারিখে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণকে কেন্দ্র করে বর্তমানে ভোটের দিন যতোই ঘনিয়ে আসছে সকল দলের ভোটার সমর্থকদের মাঝে নির্বাচনের উত্তাপ বেড়েই চলছে। তারই ধারাবাহিকতায় কুমিল্লা-৬ (সদর) সংসদীয় আসনে টানা তিন বারের সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা হাজী আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহারকে আবার নৌকার মনোনিত প্রার্থী করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। একেই দলের তার এক সময়ের চির প্রতিদ্বন্দ্বী প্রয়াত আফজল খানের মেয়ে নারী সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানা সীমাও এবারও নৌকার টিকেট না পেয়ে দলের সিদ্ধান্তে হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
গত ৪ নভেম্বর -২০২৩ তারিখে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে দুই প্রার্থীর মনোনয়নপত্রই বৈধ ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশন । এবারই প্রথম একই আসনে দুইজন রানিং সংসদ সদস্যের লড়াই দেখতে যাচ্ছে কুমিল্লাবাসী।

বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্যরা পদে থেকেই নির্বাচন করতে পারছেন । ২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তি করে নির্বাচিত সরকারের অধীনে ভোটের ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা হয় সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে। সংবিধানে এখন সংসদের মেয়াদের শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলা আছে। এই সময়ে সংসদ বসবে না,নির্বাচনকালীন সময়ে সংসদ ভেঙেও দেওয়া হবে না।

দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে কুমিল্লায় বাহার এবং আফজাল খান পরিবারের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ এমনটা কুমিল্লাবাসী অবগত। ভোটের রাজনীতিতেও বাহার – সীমার বিরোধ চরমে যা বর্তমান নির্বাচনী সভা সমাবেশে একের প্রতি অন্যের কাদা ছোরাছুরিতে প্রকাশ্যে ফুটে উঠেছে।

বিগত ২০০৮ সালের আগে সীমার বাবা আফজল খানের সঙ্গে বাহারের বিরোধের কারণে (সাবেক কুমিল্লা -৮) আসনে বিএনপি নেতা আকবর হোসেন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বার বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত।
গত ২০০১ সালে অষ্টম সংসদ নির্বাচনেও কুমিল্লা সদর আসনে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় ভোট ভাগাভাগির কারণে বিএনপির প্রার্থী আকবর হোসেনের নির্বাচিত হন।

১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে স্বাধীনতার ২১ বছর বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ প্রথম বারের মতো রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে। ৫ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকার পর ২০০১ সালে নির্বাচনে আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার নৌকার বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার কারণে আওয়ামীলীগের ভোট দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে সেই নির্বাচনেও ধানের শীষ নিয়ে আকবর হোসেন ৬৫ হাজার ৪৪৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।
সেই নির্বাচনে বাহার মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ৩১ হাজার ৪৯০ ভোট পান।
গত ২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এডভোকেট আফজাল খান মারা যান।
এরেই মধ্যে ২০১৭ সালে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আঞ্জুম সুলতানা সীমা নৌকার প্রার্থী হলে সেই বছরও আওয়ামীলীগের দলীয় কোন্দলের কারণে বিএনপির নেতা সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু মেয়র নির্বাচিত হন।
আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এখন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি, সীমা দলের মহানগর শাখার বর্তমান উপদেষ্টা। তিনি আগে কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন।

২০০৮ সালে আওয়ামিলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ১৪ বছরের সমীকরণে দেখা গেছে কুমিল্লা নগরীতে আওয়ামীলীগের মূলধারার নিয়ন্ত্রয়ক হিসেবে সকল বিষয়ে এগিয়ে বাহার। দলের সহযোগী সংগঠনগুলোর প্রায় সব নেতাই তার অনুসারী হিসেবে বিবেচিত। এবার নির্বাচনে দেখা গেছে ২০০১ সালে যারা বাহারের খুব ঘনিষ্ঠজন ছিলেন আজ তাদের অনেকেই নির্বাচনে সীমার পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন এবং নির্বাচনী সভা সমাবেশে বাহারের বিভিন্ন অসংগতি ভোটার সমর্থকদের মাঝে তুলে ধরছেন।

এবারের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জামাত সহ বেশ কয়েকটি বড় দল নির্বাচনে অংশ গ্রহণ না করায় ভোট উৎসব মুখোর ও কেন্দ্রে ভোটার উপস্হিতি বাড়াতে আওয়ামীলীগের দলীয় সিদ্ধান্তে ডামি প্রার্থীর ঘোষণা আসার কারণে নৌকার বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন দেশের বহু আসনে তারেই ধারাবাহিকতায় কুমিল্লা – ৬ সংসদীয় আসনে নৌকার মনোনিত প্রার্থী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বিপরীতে জাতীয় পাটি সহ আরো বেশ কয়েকটি দলের প্রার্থী থাকলেও প্রয়াত এডভোকেট আফজাল খানের মেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী আঞ্জুমান সুলতানা সীমার নাম নৌকার প্রধান প্রতিদ্বন্ধী হিসেবে এগিয়ে রয়েছেন বলে জানা যায়।

সরেজমিনে সাধারণ ভোটার সমর্থকদের মতামত ভিত্তিতে জানা যায় কিছুদিন আগে দূর্গা পুজায় বাহারের বক্তব্যকে সাম্প্রদায়িক বিবেচনায় নৌকা মার্কায় নয় ব্যক্তি বাহার হিসেবে অনেকটা বিবেচিত হয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোটে ভাটা পড়ার আশংকা অনেকটা স্বস্তিতে সীমা। এছাড়াও বিএনপি জামাত সমর্থকদের হাত পা ভেঙ্গে দেওয়া বক্তব্য এবং সাংবাদিককে লাঞ্ছিতের ঘটনায় নির্বাচনী আচরণবিধি লংঙ্গণ সহ কমিশনে ১ লাখ টাকা জরিমানা। এই বিবেচনায় ভোটের হিসাব নিকাশ অনেকটা পাল্টে যেতে পারে নিরব ভোট বিপ্লবে।
অন্যদিকে সীমার বিরুদ্ধেও কর্মী সমর্থকদের মাঝে ভুড়িভোজ আপ্যায়নে নির্বাচন আচরণবিধি লংঙ্গনে শোকজ করে কারণ চাওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।

সরেজমিনে কুমিল্লা সদর আসনের সিটির বিভিন্ন ওয়ার্ড কালীরবাজার,আমড়াতলী,দূর্গাপুর,জগন্নাথপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ভোটার সমর্থকদের সাথে কথা বলে জানা যায়,এবারের নির্বাচনে যদি মানুষ ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে এবং কোন বাঁধা বিহীন ভোট প্রয়োগ করতে পারে তাহলে তারা মার্কা দেখে নয় প্রার্থী দেখেই ভোট দিবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.