বিআরটিএ দপ্তরের মন্ত্রীর নোয়াখালী অঞ্চলের লক্ষীপুর জেলা সার্কেল এখন ঘুষ বানিজ্যের আতুঁরঘর

অপরাধ

অনিয়ম আর ঘুষ বানিজ্যে সহায়তা করতে এডি’র (পিএস) সহকারী নিয়োগ

এম শাহীন আলম :
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) লক্ষ্মীপুর জেলা সার্কেল এখন ঘুষ বাণিজ্যের আতঁরঘর। যেখানে দালাল আর ঘুষ ছাড়া কোন কাজ হওয়াটাই রীতিমতো ভাগ্যের ব্যপার। একদিকে দালালদের দৌরাত্ম্য অন্যদিকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সীমাহীন ঘুষ বানিজ্যে দিশেহারা হয়ে উঠেছে লক্ষীপুর বিআরটিএতে আসা গ্রাহকরা।লক্ষীপুরের জনমনে প্রশ্ন উঠেছে যেখান বিআরটিএ দপ্তরের মন্ত্রীর জন্মস্থান নোয়াখালী অঞ্চলে সেখানেই অস্বচ্ছতা,অনিয়ম আর ঘুষ বানিজ্য,দালাল ছাড়া মানুষ বিআরটিএ তে এসে কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছে না, সারা দেশের বিআরটিএ সেবার মান নিয়ে শঙ্কিত তারা।তাই লক্ষীপুরের মানুষ বিআরটিএ অফিসে কাঙ্খিত সেবা না পেয়ে হতাশ এবং চেয়ারম্যান’কে নিয়ে বাজে মন্তব্য সহ সমালোচনা করে দূর-ভাগ্যবান মনে করছে স্হানীয়রা।

সরেজমিনে অনুসন্ধানে দেখা যায় স্বয়ং প্রতিষ্ঠানটির সহকারী পরিচালক মো.এনায়েত হোসেন মন্টু তার অনিয়ম আর ঘুষ বানিজ্যে সহযোগিতা করতে স্হানীয় এক দালাল খোরশেদ আলম নামের এক যুবককে তিনি তার একান্ত সহকারী (পিএস) হিসেবে রেখে অবলীলায় অনিয়ম আর ঘুষ বানিজ্য দেদারসে চালিয়ে যাচ্ছেন।এই খোরশেদ আলম এডি’র যোগসাজশে লক্ষীপুর বিআরটিএ অফিসের পাশে পোস্ট অফিসে বসে প্রকাশ্যে বিআরটিএ’তে সেবা নিতে আসা গ্রাহকদের সাথে সরকারি ফি এর চেয়ে দুই তিন গুন বেশি টাকা কন্ট্রাক করে মাসের পর মাস বিরতিহীন ভাবে অনিয়ম আর ঘুষ বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে খোরশেদ এবং সহকারী পরিচালক মো.এনায়েত হোসেন মন্টুর সিন্ডিকেটটি । এই প্রতিষ্ঠানটির এডি এনায়েত হোসেন মন্টু এবং খোরশেদ আলম সিন্ডিকেটের অনিয়ম আর ঘুষ বানিজ্যের ক্যাশিয়ার দায়িত্ব পালন করছেন প্রতিষ্ঠানটির মোটরযান পরিদর্শক মোঃ কামরুজ্জামান, সরেজমিনে পর্যবেক্ষণে দেখা যায় মোটরযান পরিদর্শক কামরুজ্জামান ঘুষ বানিজ্যের ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালন ছাড়াও লক্ষীপুর স্হানীয় বিভিন্ন মিডিয়ার সংবাদকর্মীদের মাসিক ভাবে সরাসরি অথবা বিকাশ ম্যানেজ,স্হানীয় সরকার দলীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ সহ অনিয়মের সার্বিক কাজে অন্যান্য কর্মচারী সহ দালাল চক্রের সদস্যদেরও তিনি এডি এনায়েত হোসেন মন্টুর যোগসাজশে অনিয়ম এবং ঘুষ বানিজ্যে সহযোগিতা করে থাকেন।যা সরেজমিনে এই অফিসে কোন কাজ নিয়ে গেলেই বুঝার বাকি থাকে না।

সরেজমিনে অনুসন্ধানে ছদ্মবেশে ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে অপরাধ বিচিত্রা এবং দৈনিক বাংলা খবর টিমের সাথে কথা হয়,লক্ষীপুর বিআরটিএ অফিসে কর্মরত (সরকারি ভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত) অফিস সহায়ক ইকরাম হোসাইন এর সাথে। অফিস সহায়ক ইকরাম হোসাইন বলেন,আমাকে দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে হলে একদাম ১১হাজার করে দুইটা ২২ হাজার টাকা লাগবে।তিনি জানান, আমি তো কম নিচ্ছি, অন্যদের দিয়ে কাজ করালে ১২-১৩ – ১৫ হাজারও লাগতে পারে , আর টাকা লেনদেনের বিষয়ে জানতে চাইলে ইকরাম হোসাইন বলেন,প্রথমে প্রতি লাইসেন্সে ২ হাজার দ্বিতীয় বারে ৪হাজার এবং পরীক্ষার দিন ৫ হাজার টাকা দিবেন।লিখিত পরীক্ষার ব্যপারে ইকরাম হোসাইন বলেন, এই বিষয়ে চিন্তা করতে হবে না, আপনাদের আমি পরীক্ষার প্রশ্নের পিডিএফ ফাইল পরীক্ষার আগে দিয়ে দেবো আপনারা শুধু লিখিত পরীক্ষাটা দিবেন,বাকি সব আমি দেখবো।পরীক্ষার হলে ম্যাজিস্ট্রেষ্ট ম্যানেজ করা অফিসের সকল টেবিল ম্যানেজ করার দায়িত্বও অফিস সহায়ক ইকরাম হোসাইন তিনি তার ঘাড়ে নেন।ইকরাম হোসাইন বলেন, এই বারতি টাকা তিনি একা খাননা তিনি অফিসের সকল টেবিলে দিয়ে কাজ করান,অফিস সহায়ক ইকরাম হোসাইন এর সাথে সাংবাদিক টিমের কথোপকথনের ভিডিও চিত্র সংরক্ষিত আছে।

সরেজমিনে অনুসন্ধানে স্হানীয় সূত্র মতে আরো জানা যায়, খোরশেদ গং এবং এডি এনায়েত হোসেন মন্টু সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি লক্ষীপুর বিআরটিএ’তে আসা যানবাহনের সাথে সংশ্লিষ্টরা। অন্য দিকে একেই লাইসেন্স করতে বিআরটিএ অফিসের বাহিরে পাশে পোস্ট অফিসে চেম্বার নিয়ে বসে থাকা লক্ষীপুর বিআরটিএ সহকারী পরিচালক এনায়েত হোসেন মন্টুর একান্ত সহকারী(পিএস) পরিচয়দানকারী খোরশেদ আলম এর নিকট আলাপ করলে খোরশেদ দাবী করে বলেন, তিনি এডি এনায়েত হোসেন মন্টুর একান্ত সহকারী (পিএস) তিনি কোন ঝামেলা ছাড়াই শতভাগ গ্যারান্টি সহকারে কাজ করে দিবেন। খোরশেদ বলেন সব খরচ আমার ড্রাইভিং প্রতি লাইসেন্স খরচ আমাকে ১৫ হাজার টাকা দিবেন, আপনার সাটিফিকেট না থাকলেও কোন সমস্যা নেই সাটিফিকেট এর ব্যবস্হা আমি করবো, পরীক্ষা পাশ করেন আর ফেল করেন তাতে সমস্যা নেই, আপনাকে পাশ করানের দায়িত্ব আমার। এডি এনায়েত হোসেন মন্টুর সহকারী পরিচয়দানকারী খোরশেদ বলেন, আমি লক্ষীপুর বিআরটিএ সার্কেল এর সহকারী পরিচালক এনায়েত হোসেন মন্টু স্যারের পিএস আমি যা বলবো এখানে তাই হবে এবং কোন সমস্যা হবে না,এখন কিছু টাকা দিতে হবে বাকিটা পরীক্ষার দিন দিলে চলবে। সাংবাদিকদের সাথে এডি’র (পিএস) পরিচয়দানকারী খোরশেদ আলমের কথোপকথন ভিডিও চিত্র সংরক্ষিত আছে।

এছাড়াও লক্ষীপুর বিআরটিএ অফিসে ড্রাইভিং লাইসেন্স, মোটরযান রেজিষ্ট্রেশন, রুট পারমিটসহ সর্বক্ষেত্রে এ কার্যালয়ে দালাল ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ বানিজ্যের এক প্রকার প্রকাশ্যে প্রতিযোগিতা চলে মাসের পর মাস,স্হানীয় প্রত্যেক্ষদর্শী এবং মোটরযানের সাথে জড়িত সেবা গ্রহিতারা জানান,”নোয়াখালী অঞ্চলে এই দপ্তরের মন্ত্রীর এলাকা তারপরও ঘুষ আর দালাল ছাড়া কোন কাজই সরকারি নিয়মে হয়না” ভুক্তভোগীরা জানান, বর্তমান এডি এনায়েত হোসেন মন্টু আসার পর থেকে এই বিআরটিএ অফিসে প্রকাশ্যে ঘুষ বানিজ্য বেড়ে গেছে, সেবা গ্রহিতারা আরো জানান,এই এডি আসার পর কোন গ্রাহক কন্ট্রাক ঘুষ ছাড়া সেবা পাওয়া টা রীতিমতো ভাগ্যের ব্যপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সরেজমিনে লক্ষীপুর বিআরটিএ অফিসে সেবা নিতে আসা একাধিক গ্রাহক এবং ভুক্তভোগী জানান, মোটরযান এনডোর্সমেন্ট, মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস সার্টিফেকেট, স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স, মোটরযানের শ্রেণী পরিবর্তন বা সংযোজন/ ধরণ পরিবর্তন / অন্তর্ভুক্তি / পিএসভি / তথ্য সংশোধন, ডুপ্লিকেট সার্টিফিকেট, রুট পারমিট, ড্রাইভিং লাইসেন্স সহ লক্ষ্মীপুর বিআরটিএ কার্যালয়ে যে কোন কাজ করতে গেলে দিতে হবে ঘুষ। কার্যালয়টির সামনে ছদ্মবেশী দালাল আর ভিতরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সীমাহীন ঘুষ বানিজ্যে দিশেহারা হয়ে পড়ে গ্রাহকরা। শুধু তাই নয় দূর-দূরান্ত থেকে আসা সাধারণ মানুষের সাথে দুর্ব্যবহার এ কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিত্যদিনের সঙ্গী। দালাল আর ঘুষের টাকা না দিলে বিভিন্ন তালবাহনা দেখান বিআরটিএ কার্যালয়ের এই কর্মকর্তারা গ্রাহকদের হয়রানি হতে হয় মাসের পর মাস, দালাল আর ঘুষ বানিজ্য ছাড়া লিখিত পরীক্ষা পাশ করাটাই চ্যালেঞ্জিং আর ঘুষ দিলেই সহজে মিলে কাঙ্খিত সেবা।

অনিয়ম আর ঘুষ বানিজ্যের বিষয়ে সহকারী পরিচালক মো.এনায়েত হোসেন মন্টুর সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার চাকুরীর বয়স আর বেশি দিন নেই,তিনি আরো বলেন, আমার অফিসে অনিয়মের প্রশ্নই ওঠে না আর আমার জানা মতে আমার অফিসের কেউ অনিয়মের সাথে জড়িত না। আর পিএস পরিচয়দানকারী খোরশেদ আলম কে এর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই নামের কাউকে আমি চিনিই না এবং এই নামের লোকের সাথে আমার পরিচয় নেই।আরো অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে পরবর্তী সংখ্যায় ২য় পর্বে বিস্তারিত ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.