নওগাঁর মান্দায় বিপদসীমা ছুঁইছুঁই করছে আত্রাই নদীর পানি

অন্যান্য

নাজমুল হক :
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে নওগাঁর মান্দায় হুহু করে বাড়ছে আত্রাই নদীর পানি। এ নদীর পানি বেড়ে এখন বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি যেভাবে বাড়ছে তাতে যেকোনো সময় তা বিপদসীমা অতিক্রম করবে।

এদিকে নদীর পানি বাড়তে থাকায় বেড়িবাঁধের পুরাতন তিনটি ভাঙন স্থান দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। এরই মধ্যে শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যার আতঙ্ক বিরাজ করছে নদী পাড়ের মানুষের মাঝে।

নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে আত্রাই নদীর পানি একটু একটু করে বাড়ছে। এ অবস্থায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে শুক্রবার থেকে হুহু করে বাড়তে থাকে এ নদীর পানি। গত ২৪ ঘণ্টায় এ নদীর পানি ৭০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আগামি ২৪ ঘন্টার মধ্যে তা বিপদসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের ভয়াবহ বন্যার সময় নুরুল্লাবাদ ইউনিয়নের পারনুরুল্লাবাদ গ্রামের ভাদু মকবুলের বাড়ির পূর্বপাশে এবং বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের চকরামপুর ও কয়লাবাড়ি নামকস্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও বেড়িবাঁধের এসব ভাঙন স্থান আর মেরামত করা হয়নি। নদীর পানি বাড়লে অনায়াসে এসব ভাঙন স্থান দিয়ে হুহু করে পানি ভেতরে প্রবেশ করে। তলিয়ে যায় খেতের ফসল। পানিবন্দি হয়ে পড়েন অন্তত পাঁচ শতাধিক পরিবার।

নদী পাড়ের বাসিন্দারা জানান, বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই বন্যা আতঙ্কে থাকেন নদী পাড়ের মানুষ। এ সময় তাঁদের নির্ঘূম রাত কাটাতে হয়। দিনরাত পাহারা বসিয়ে রক্ষা করতে হয় বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ। ফসল ও বাড়িঘর রক্ষার জন্য স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করেন তাঁরা।

বন্যাকবলিত এলাকা বলে পরিচিত চকরামপুর গ্রামের বাসিন্দা ইব্রাহীম হোসেন বলেন, ২০১৭ সালের বন্যায় বেড়িবাঁধের দুই স্থান ভেঙে যায়। ভাঙন স্থানগুলো মেরামতের জন্য বিভিন্ন দপ্তরের দফায় দফায় আবেদন দিয়েও কাজ হয়নি। সেই থেকে এখন পর্যন্ত ভাঙন স্থান দুটি খোলা অবস্থায় আছে। নদীর পানি বাড়লেই তা লোকালয়ে ঢুকে যায়। তলিয়ে যায় বেড়িবাঁধের ভেতরে থাকা বিভিন্ন ফসলের খেত। পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগ পড়েন কয়েক হাজার মানুষ।

বনকুড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল জব্বার বলেন, আত্রাই নদীর ডানতীরের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার করা হয়নি। বাঁধের দুইধারে বার্ম নেই। সংস্কারের অভাবে বাঁধটি সংকুচিত হয়ে গেছে। এ অবস্থায় পানি বাড়তে শুরু করলে নদীপাড়ের মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বাঁধ রক্ষায় নির্ঘূম রাত কাটাতে হয় তাঁদের।

নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান খান বলেন, কয়েকদিনের বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের কারণে আত্রাই নদীর পানি বাড়ছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে যেকোনো সময় পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। ঝুঁকির মুখে পড়বে কয়েকটি বেঁড়িবাঁধসহ দুই তীরের বন্যানিয়ন্ত্রণ মূল বাঁধ।

তিনি আরও বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো মনিটরিং এর কাজ চলছে। বাঁধ রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত মালামাল মজুত রাখা হয়েছে। বন্যা মোকাবেলায় সবধরণের প্রস্তুতি রয়েছে বলেও জানান পাউবোর শীর্ষ এই কর্মকর্তা।

এ প্রসঙ্গে মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু বাক্কার সিদ্দিক বলেন, বন্যা মোকাবেলায় এরই মধ্যে ৭ সদস্যের তদারকি টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া জরুরী মুহূর্তের জন্য বস্তাসহ বিভিন্ন উপকরণ প্রস্তুত রাখার কাজ চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.