গাজীপুর সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আবাস আওয়ামীলীগের

অপরাধ

বিশেষ প্রতিনিধি :
মেয়র জাহাঙ্গীর আলম জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের নিয়ে কটূক্তি ও অসন্মান করায় গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে শীঘ্রই ব্যবস্থা নিতে চলেছে আওয়ামী লীগের হাই-কমান্ড। এরেই মধ্যে দলের একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, এই অপরাধে মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করার কথা ভাবা হচ্ছে। একই সঙ্গে তাকে মেয়রের পদ থেকে  সরানোর আইনি প্রক্রিয়া খুঁজছে আওয়ামী লীগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির একাধিক নেতা গণ-মাধ্যমকে বলেছেন, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের মীমাংসিত ইস্যু নিয়ে জাহাঙ্গীর আলম বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। তাঁর এমন বক্তব্য দলীয় ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পরিপন্থী। এ কারণে তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিষয়ে দলীয় সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকেরা একমত। তাই অলৌকিক কিছু না ঘটলে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। একই সঙ্গে তিনি মেয়র পদও হারাতে পারেন।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও ক্লিপে মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে বলতে শোনা যায়, আমাদের বঙ্গবন্ধু ৩০ লাখ (মুক্তিযোদ্ধা) মারাইছে। ৬৪ জেলায় ৪৫ হাজার করে মরেছে প্রতি জেলায়। তাঁর স্বার্থ উদ্ধার করে নিয়েছে। এই ভিডিও প্রকাশের পর জাহাঙ্গীরকে দল থেকে বহিষ্কার ও পদ থেকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলন করেন গাজীপুর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

এ ঘটনার পর ৩ অক্টোবর জাহাঙ্গীর আলমকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। সেখানে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তাঁকে জবাব দিতে বলা হয়। জাহাঙ্গীর নোটিশের জবাবও দিয়েছেন।

নোটিশের জবাব নিয়ে ২২ অক্টোবর আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে আলোচনা হয়। বৈঠকে উপস্থিত মনোনয়ন বোর্ডের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাঁর শোকজের জবাব নিয়ে আমরা আলোচনা করেছিলাম। তাঁর জবাব আমাদের কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হয়নি। অনেকটা দায়সারা মনে হয়েছে। সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন। একই সঙ্গে মেয়র পদটি নিয়েও ভাবা হচ্ছে। চিঠির জবাবের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জাহাঙ্গীর চিঠিতে দাবি করেছেন, তাঁর বক্তব্যগুলো জোড়াতালি দেওয়া হয়েছে। শেষে তিনি ক্ষমা চেয়েছেন।

বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মেয়র জাহাঙ্গীরের বিতর্কিত বক্তব্যকে শুধু দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করছে না আওয়ামী লীগ। দেশের বিদ্যমান আইনে এটাকে অপরাধ হিসেবেই দেখছে তারা।

আওয়ামী লীগের এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বক্তব্যটি আমি কয়েকবার শুনেছি। সেটা শুনে আমার কাছে জোড়াতালি মনে হয়নি। আর এখন বক্তব্য আসল না নকল সেটা ধরারও নানা প্রযুক্তি রয়েছে। সেই মাধ্যমেও নিশ্চিত হয়েছি আমরা। সেটা জাহাঙ্গীরেরই বলে আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছি।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের এক সদস্য বলেন, জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ জমা হয়েছে। সেগুলো নিয়ে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামেও আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া গত বছরের মাঝামাঝি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের একজন প্রকৌশলী খুন হন। সেটি নিয়েও নানা আলোচনা রয়েছে। তিনি বলেন, সে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে, সেটা ক্ষমার অযোগ্য।

এতে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাসহ আমরা সবাই আহত হয়েছি। এ অপরাধে তাকে ক্ষমা করা হলে ভবিষ্যতে এ রকম আরও পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি হতে পারে। তাই আমরা তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে সবাইকে সতর্ক করতে চাই। কোনো অঘটন না ঘটলে আগামী ১৯ নভেম্বরের কার্যনির্বাহী বৈঠকেই এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, জাহাঙ্গীর সম্পর্কে এখন আমাদের কোনো কথা বলার সুযোগ নেই। আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী ১৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত কার্যনির্বাহী বৈঠকে আলোচনা হবে। আলোচনাসাপেক্ষে যে নির্দেশনা আসবে, তা আমরা দলীয়ভাবে বাস্তবায়ন করব।

বিষয়টি নিয়ে জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি গণ-মাধ্যমকে বলেন, আগে তো ১৯ তারিখ আসুক, তারপর দেখা যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.