কুড়িগ্রামে লাভের পরের টাকা না পেয়ে-তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন

অপরাধ

নয়ন দাস,কুড়িগ্রাম থেকে :
কুড়িগ্রাম সদরে ঋণের টাকার অতিরিক্ত সুদ না পেয়ে বানছার উদ্দিন (৩৬) নামে এক ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করে তার সঙ্গে থাকা মেয়ের বিয়ের গহনার ৩০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গুরুতর আহত বানছার উদ্দিন কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় কুড়িগ্রাম সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হলেও অভিযুক্তদের কেউ গ্রেফতার না হওয়ায় উল্টো অভিযোগ তুলে নিতে নির্যাতিতকে হুমকী দেয়া হচ্ছে। ঘটনাটি ঘটেছে সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের হাইস্কুল পাড়ায়।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের চর রসুলপুর গ্রামের বাসিন্দা বানছার আলী বারবার নদী ভাঙনের কারণে প্রায় ২৫ বছর পূর্বে গোঘাদহ হাইস্কুলের পিছনে ৫ শতক জমি কিনে সেখানে পরিবারসহ বসবাস করেন। শ্রমজীবী বানছার আলী বিভিন্ন জেলায় মজুরী করা অর্থ দিয়ে সংসার নির্বাহ করেন।

এরমধ্যে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পার্শ্ববর্তী পাঁচগাছী ইউনিয়নের গারুহারা গ্রামে জনৈক আবদুলের পূত্র রফিকুলের সাথে তার একমাত্র মেয়ে মাসুদা বেগমের বিয়ে ঠিক করেন।

এজন্য ঘোগাদহ স্বাস্থ্য ক্লিনিক পাড়ার সুদ কারবারি রশীদা বেগমের কাছ থেকে তিনি ৩০ হাজার টাকা ধার নেন।

দুজনের মধ্যে চুক্তি হয় এক বছরের মধ্যে ৩০ হাজার টাকাসহ দু’খন্দে ৬মন করে অতিরিক্ত ১২মন ধান লাভ দিবেন। দিনমজুর বানছার আলী অনেক কষ্ট করে এক বছর পর ৩০ হাজার টাকাসহ ৭মন ধান দেন। বাকী ৫মন ধান না দেয়ায় দুজনের মধ্যে বাক বিতন্ডা হয়।

এরই জের ধরে ১৩জুন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রাশীদা বেগমের ভাই মঞ্জুরুল, জ্যাঠাত ভাই সুমন, চাচাতো ভাই আনিছুর, ভগ্নিপতি জসমত, হাসমত আলী ও রবিউল ঘোগাদহ হাই স্কুলের পিছন থেকে বানছার আলীকে সুমনের মটর সাইকেলে তুলে নিয়ে যায়।

তাকে একই ইউনিয়নের দুবাআছড়ি গ্রামে রশীদাা বেগমের চাচা মোক্তার আলীর বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রশীদা বেগমের উপস্থিতিতে নির্মমভাবে নির্যাতন চালানো হয়।

প্রথমে তার উপর এলোপাথারী মারপীট করা হয়। এরপর আনিছুর রহমান বানছার আলীর বৃদ্ধা ও মধ্য আঙ্গুলে ময়নার কাটা ঢুকিয়ে নির্যাতন করে।

সুমন মিয়া এসময় পায়ের জুতা দিয়ে মুখে চাপা দিয়ে রাখে। নির্যাতন চলাকালে রশীদা বেগম বানছার আলীর পকেট থেকে ৩০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়।

পরে চিৎকার চেঁচামেচী শুনে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে বানছার আলীকে তারা ছেড়ে দেয়। পরে আহত বানছার আলীকে উদ্ধার করে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রশীদা বেগমের স্বামী আজিজুল হক চট্রগ্রামে কাজ করেন। আর রশীদা বেগম গ্রামের মধ্যে সুদের ব্যবসা করেন।

বানছার আলী জানান, আমি গরীব মানুষ। ৩০ হাজার টাকা ও ৭মন ধান দিয়েছি। বাকী ধান পরের মৌসুমে দিবো বললেও তারা শোনেনি। এমনিতে গহনা ছাড়া মেয়ের বিয়ে দেয়ায় শশুরবাড়ির লোকজন মেয়েকে দুমাস আগে বাড়িতে ফেরৎ পাঠিয়েছে। পরে গয়নাসহ মেয়েকে পাঠাতে বলেছে।

এজন্য আমি খালাত ভাই স্কুল শিক্ষক এরশাদুলের কাছ থেকে গহনা বানানোর জন্য ৩০ হাজার টাকা ধার করি। সেই টাকা নিয়ে গহনার অর্ডার করতে ঘোগাদহ বাজারে যাওয়ার পথে রশীদার আত্মীয়-স্বজন আমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করে। তারা আমার আঙ্গুলে ময়নার কাটা খুচিয়ে দেয়।

অনেক অনুনয় বিনয় করেও তাদের হাত থেকে রেহাই পাইনি। এসময় গহনা তৈরীর ৩০ হাজার টাকা রশীদা বেগম ছিনিয়ে নেয়। এখন উল্টো আমাকে অভিযোগ তুলে নেয়ার জন্য হুমকী দিচ্ছে।

বানছার আলীর খালাত ভাই এরশাদুল হক জানান, ৯জুন আমি বিল তুলি সেখান থেকে ১২জুন সন্ধ্যায় বানছার আলীকে ৩০ হাজার টাকা ধার দেই। ১৩ জুন ঘোগাদহ বাজারে স্বর্ণ ব্যবসায়ী সুবাশের দোকানে যাওয়ার পথে বানছার আলীকে অপহরণ করে নির্মম নির্যাতন করা হয়। এখন হাসপাতালে চিকিৎসা করার অর্থও তার নেই।

ঘোগাদহ ইউনিয়নের ওই এলাকার মেম্বার আবুল কালাম আজাদ জানান, বানছার আলীকে কষ্ট দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। তাকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করি।

উভয়পক্ষকে নিয়ে বসার চেষ্টা করি। কিন্তু রশীদা পক্ষ বসতে রাজি নয়। ফলে সমাধান হচ্ছে না।

অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা সাব ইন্সপেক্টর মাজেদুল ইসলাম জানান, বানছার আলীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘোগাদহের চেয়ারম্যানসহ বসার চেষ্টা করি। কিন্তু হামলাকারি পক্ষ চেয়ার‍্যানকেও গুরুত্ব দিচ্ছে না। শুক্রবার (২জুলাই) বসার কথা। সমাধান না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

এ ব্যাপারে ঘোগাদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ আলম জানান, উভয়পক্ষকে নিয়ে বসার সিদ্ধান্ত হয়েছে। চেষ্টা করা হবে সমাধানের।

Leave a Reply

Your email address will not be published.