একজন ভালো ও আদর্শ রাজনৈতিক নেতার বৈশিষ্ট্য

অন্যান্য

হালিম সৈকত :
নেতৃত্ব দেওয়া পৃথিবীতে কঠিনতম কাজের মধ্যে অন্যতম। সঠিক নেতৃত্বের অধিকারী ব্যক্তি যিনি পৃথিবীর যে কোনো কাজকে সফলভাবে শেষ করতে সক্ষম।
যিনি দলের মধ্যে নিজের প্রভাব সফলভাবে কাটিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে সাহায্য করেন তিনি হচ্ছেন আসল নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন।

আজ আমরা আদর্শ নেতার গুণাগুণের কথা আলোচনা করব

১.সাহসিকতা:
নির্ভীকভাবে যেকোনো কাজ এগিয়ে যাওয়ার ক্ষমতার মধ্যেই প্রকৃত নেতৃত্বের প্রকাশ হয়। সময়ে সময়ে এক নেতাকে গতানুগতিক রাস্তার বাইরে হেঁটে অজানা রাস্তায় হাঁটতে হয়। তবে এমনটা করার সময় প্রকৃত নেতারা কোনদিনও পিছিয়ে যান না।
২.দায়িত্ব:
যে কোনো নতুন রাস্তায় হাটতে গেলে ভুল হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। ভুল অনেক ধরনের হতে পারে। তিনি নিজেও ভুল করতে পারেন। বা ভুলটা তিনি না করলেও তারই দলের অন্য কেউ করেছে। তখন একজন ভাল নেতা সবকিছু ভুলে গিয়ে সেই ভুলের নৈতিক দায়িত্ব পালন করেন।
৩.আশাবাদী এবং ইতিবাচকতা:
খারাপ সময় কি খারাপ সময় না ভেবে ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তাভাবনা করা ভালো নেতৃত্বের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। অনেক সময় পরিস্থিতি আমাদের স্বপক্ষে থাকে না।
যেকোনো কিছু শুরু করবার সময় আমরা অর্থনৈতিক বা মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ি । এক্ষেত্রে একমাত্র একজন ভাল নেতা মন খারাপ না করে ঠিকঠাক কাজ চালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখেন।
৪.আত্মবিশ্বাস:
ইতিহাস সাক্ষী আছে যখন পৃথিবীর একজন ব্যক্তি ও একজন নেতাকে বিশ্বাস করেন না, তখন সেই নেতা নিজের উপর বিশ্বাস হারান না।
এমনকি দেখা গেছে অনেক সময় পরিবার থেকেও নেতারা তেমনটা সহযোগিতা পান না । তবুও তারা কখনোই নিজের উপর বিশ্বাস হারাতে রাজি নন।
৫.মানের স্তর সম্মন্ধে লক্ষ্য রাখা:
একজন প্রকৃত নেতার সবসময়ই মানের স্তরের উপর তীক্ষ্ম নজর থাকে। পণ্য সামগ্রী কেনার সময় তিনি অনেক ভালভাবে যাচাই করতে পারেন।
ঠিক তেমনি কোনো ব্যক্তিকে তার নিজের দলের আওতায় আনতে ও তিনি সঠিক পরখ করে নিতে পারেন।
৬.স্ব অনুপ্রাণিত:
বলা আর করার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে।সমাজের অনেকেই রয়েছে যারা অনেক কিছু বলতে পারেন কিন্তু বাস্তবে কিছু করতে গেলে কিছুদিনের মধ্যেই সেই বিষয়টিতে নিজের আকর্ষণ হারিয়ে ফেলেন।
কিন্তু প্রকৃত নেতার ক্ষেত্রে তা হয় না। তিনি সব সময়ই কোন কাজকে নতুন করে শুরু করতে আগ্রহ রাখেন।
৭. মানসিক ভাবে প্রবৃত্ত:
একজন নেতা যেকোনো কাজেই অনেক বেশি একাত্ম হতে পারেন। তিনি সেই কাজটির জন্য নিজের সর্বস্ব দিয়ে ভাবতে পারে।
সময়, টাকা পয়সা বা অন্যান্য শক্তি বিনিয়োগ করতেও পিছপা হন না। তিনি যখনই কাজটি শুরু করে ন, কাজটি শেষ হওয়া অবধি সেই কাজে লেগে থাকেন।
৮. চরিত্র:
একজন নেতার আরেকটি মস্ত বড় গুণ হচ্ছে তার চরিত্র। নেতা তার চরিত্র দিয়ে তার দলের সঙ্গীদের আকর্ষণ করেন। শুধু তাই নয় সম্পূর্ণ সমাজ ও একজন নেতার চরিত্র দেখেই তার সম্বন্ধে নতুন ধারণা তৈরি করে।
৯. মনকে নিয়ন্ত্রণ রাখার ক্ষমতা:
একজন নেতার ঠান্ডা মাথায় কাজ করা খুবই প্রয়োজন। আর ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে গেলে সবচেয়ে প্রথম ধাপ হচ্ছে মনকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা।
দুর্ঘটনা বা ক্ষতির সম্ভাবনাল
য় মাথা ঠান্ডা রেখে সে কাজটি সম্পন্ন করতে হয় যা একজন নেতা খুব ভালোভাবেই জানেন।
১০. মানসিক শক্তি এবং বুদ্ধি:
মানসিক শক্তি এবং মানসিক বুদ্ধি একজন ব্যক্তিকে অন্য একজন ব্যক্তি থেকে আলাদা করে তুলে।
এই শক্তি মানুষকে অন্যরকম ভাবতে সাহায্য করে।বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গেছে যারা নেতৃত্ব দিতে পারদর্শী তাদের মানসিক শক্তি ও বুদ্ধি খুবই তুখোড়।
১১. কৌতুক :
বিভিন্ন নতুন গবেষণা থেকে জানা গেছে যারা নেতৃত্ব দিতে ভালোবাসেন তারা কৌতুকেও আগ্রহ রাখেন।
সূক্ষ্ম কৌতুক গুলি তারা খুব ভালভাবেই বুঝতে পারেন। এবং অনেক সময় দেখা যায় তারা সেই গুণ নিজের জীবনে প্রয়োগ করে অনেক ধনী এবং উচ্চ পদে চলে যান।
১২. আবেগের সাথে কাজ করার ক্ষমতা:
যে কোন কাজে সফল হওয়ার জন্য কাজের প্রতি ভালোবাসা রাখাটা খুবই প্রয়োজন। আর যারা নেতৃত্ব দিতে ভালোবাসেন তারা ভাল করেই জানি কোন কাজটি তাদের পছন্দের। আবেগ ভালোবাসা কে যথার্থ মূল্য দিয়ে তারা কাজ শুরু করেন। আর এভাবেই তারা এক দক্ষ নেতা হিসেবে উঠে আসেন।
১৩.কঠোর পরিশ্রম করার শক্তি:
একজন নেতার কঠোর পরিশ্রম করার শক্তি রয়েছে। অপরিসীম ধৈর্যের অধিকারী। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে কাজ করে সেই কাজ থেকে যদি কোন ইতিবাচক পরিবর্তন না ঘটে তবুও ধৈর্য হারান না। দিনের পর দিন কাজ করে যান এবং পরিশ্রম করেন যতদিন পর্যন্ত সফল হতে পারছেন না।
১৪. সততা, বিশুদ্ধতা:
সততা এবং বিশুদ্ধতা গুন দুটি খুবই কম মানুষের মধ্যে পাওয়া যায়। যারা সততা এবং বিশুদ্ধতার সাথে যেকোনো কাজে এগিয়ে যান তারা সমাজের ,দলের ,পরিবারের বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে প্রচুর সম্মান পান। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের কে বেসরকারি সংস্থা থেকেও সাহায্য করা হয়।
১৫. ঐক্য বজায় রাখার ক্ষমতা:
সাধারণত একজন প্রকৃত নেতৃত্বের অধিকারী ব্যক্তি তার টিমকে খুব ভালোবাসেন। দলের কোনো ভুল হলে সেই ভুল বা ক্ষতিকে দায়িত্ব নিয়ে নিজের কাঁধেই চাপিয়ে দেন। এতে দলের মধ্যে ঐক্যবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। একজন টিম মেম্বার আরেকজনকে আরো বেশি বিশ্বাস করতে পারে।
১৬. সুযোগকে বোঝার ক্ষমতা:
প্রকৃতি সবসময় মানুষকে নতুন সুযোগ দিতে চায়।পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রকৃতি মানুষকে নতুন সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু খুব কম মানুষই সেই সুযোগকে বুঝে উঠতে পারেন। একমাত্র নেতারাই সেই সুযোগকে ভালো করে বুঝে সেটাকে কাজে লাগাতে পারেন।
১৭. নিয়মানুবর্তিতা:
একজন নেতার আর একটি ভাল গুণ হচ্ছে তিনি একজন নিয়মানুবর্তী ব্যক্তি হন। বিভিন্ন গবেষণা মতে একজন ব্যক্তি তার ট্যালেন্ট এর জন্য এগিয়ে যায় না। এগিয়ে যায় তার কঠোর অর্থাৎ নিয়ম করে সেই কাজটি বার বার করার মাধ্যমে। যে ব্যক্তি নিয়মানুবর্তিতা ধরে রাখতে পারেন তিনি খুব ভালো একজন নেতা হতে পারেন।
১৮. সৃজনশীলতা:
যেকোনো কাজ করতে গিয়ে ভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে ভেবে নতুনরূপে কাজটি করার মাধ্যমে মানুষ এগিয়ে যায়। একজন নেতা যেকোনো কাজে যুক্ত হলে সেই কাজটি কে সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করে সম্পন্ন করতে পারেন।
১৯. নতুন দৃষ্টিভঙ্গি:
যে কোন জিনিসকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি বা দৃষ্টিকোণ নিয়ে ভাবার মধ্য দিয়ে আপনার ক্ষমতার প্রকাশ পায়। কোন একটি ব্যাপারে দেখা যায় এতে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিক দুটোই রয়েছে। কিন্তু একজন নেতা ইতিবাচক দিকগুলো ভালোভাবে বুঝতে পারেন এবং সেগুলো কাজে ও লাগাতে পারেন।
২০.বিনীত এবং নম্র:
নেতা সর্বদা বিনীত এবং ভদ্র হয়। একজন নেতা হওয়ার জন্য সর্বপ্রথম আপনাকে অন্যের প্রিয় ব্যক্তি হতে হবে। অন্যের জন্য প্রিয় ব্যক্তি হওয়ার জন্য সবচেয়ে বড় দরকারি গুনাগুন গুলো হল নম্র এবং ভদ্র হওয়া।
২১. একজন ভালো শ্রোতা:
নেতা খুব ভালো শ্রোতা হন। তিনি শুধু নিজের নয় অন্যের কথা শুনতেও খুব ভালোবাসেন। অন্যের কথা শুনার মাধ্যমেই অন্যকে জানার চেষ্টা করেন।
২২.নতুন কিছু শিখতে আগ্রহ রাখা:
নতুন বিষয় শিখার জন্য তার আগ্রহ থাকে। রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিতে পারেন যদি নতুন জিনিস থাকে কোন কারণে শিখতে হয়। অন্যান্য মানুষ সাধারণত নতুন জিনিস শিখতে আগ্রহী থাকেন না।
২৩. বিশ্বাস আদায়ের ক্ষমতা রাখাঃ
অন্যের বিশ্বাস আদায়ের ক্ষমতা রাখেন একজন নেতা। তিনি অন্যকে ভালবাসেন । যেকোনো কাজে তিনি আশেপাশের মানুষকে এবং টিমের মেম্বারদের খুব ভালোবাসেন।
২৪. সময়কে সঠিক ভাবে ম্যানেজ করার ক্ষমতা
সময়কে সঠিক ভাবে ম্যানেজ করে কাজে লাগানোর বিচক্ষণতায় একজন নেতাকে কেউ দমাতে পারে না। তিনি ভালো করেই জানেন কি করে সময়কে কাজে লাগাতে হয়।
২৫. নিজের মধ্য দিয়ে উদাহরণ দেওয়া
নেতা নিজের উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে প্রত্যেকটি ব্যাপারে একটি অনন্য পরিবেশের সৃষ্টি করেন। ফলে টিমের মেম্বার নেতা থেকে অনুপ্রাণিত হয়।
২৬.মিশুকে প্রকৃতির হওয়া:
নেতা মিশুকে প্রকৃতির হন। তিনি মানুষের সাথে মিশতে ভালোবাসেন। মানুষের সাথে মিলে মিশে থাকতে ভালোবাসেন। ঝগড়া কলহ অন্তর্দ্বন্দ্ব থেকে তিনি সাধারণত দূরে থাকেন।
২৭.নতুন সম্পর্ক স্থাপন করার ক্ষমতা
নতুন বন্ধু বানিয়ে নতুন সম্পর্ক বানাতেও একজন নেতার ভূমিকা অসাধারণ থাকে। তিনি যে কোন পরিস্থিতিতে বন্ধু বানাতে সক্ষম হন। তবে তিনি অদরকারি বন্ধুত্ব থেকে দূরে থাকেন।
২৮. যুক্তিসঙ্গত ভাবে চিন্তা করা
নেতা যুক্তি সঙ্গতভাবে চিন্তা করতে একধাপ এগিয়ে থাকেন। সাধারণত তিনি হুজুগের বসে কোন কাজ করেন না।
২৯. আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা
একজন প্রকৃত নেতৃত্বের অধিকারী ব্যক্তি সবসময়ই আলোচনায় আগ্রহী হন।পরিবারের মানুষ ,বন্ধু বান্ধব, টিম মেম্বার, দলের অন্যান্য ব্যক্তি সবার সাথে আলোচনা করতে এগিয়ে থাকেন।
৩০. অন্যকে শেখানোর মত ক্ষমতা
সাধারণত প্রত্যেক ব্যক্তি কাজে সমান দক্ষ হয় না। কিন্তু সেই ব্যক্তি দুর্বলতাকে দূর করে নতুন কাজে আগ্রহী করে তোলা একটি কঠিন পর্যায়। নেতা অন্যকে নতুন কিছু শেখাতে আগ্রহী করতে খুবই পারদর্শী।
৩১.অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দিতে আগ্রহী হওয়া
যেকোনো কাজ করতে তিনি অন্যের মতামতকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে চলেন। সেই মতামত খুবই কাজের না হলেও তিনি সেই মতামতকে গ্রাহ্য করেন। মতামতটি খারিজ করার মতো হলেও অনেক ভেবে চিন্তেই বাতিল করেন।
৩২.নিজের টিমের উপর আস্থা রাখা
নিজের অন্যান্য টিম মেম্বার এর প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা রাখেন। খুব স্বাভাবিক ভাবেই একজন ব্যক্তি প্রত্যেকটি কাজ করতে পারে না।
যেকোনো কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে তার অন্যান্য ব্যক্তির দরকার পরে। ফলে কোন কাজকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে টিমের উপর আস্থা রাখতে হয়। প্রকৃত নেতৃত্বের অধিকারী টিমের উপর আস্থা রেখে সুন্দরভাবে কাজটি সম্পন্ন করান।
৩৩.নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করা
শেষে একটি কথা বলতে চাই, একজন নেতা এতটা করার ক্ষমতা এ কারণেই রাখেন কারণ তিনি তার স্বপ্ন কে খুবই ভালোবাসেন। এবং শেষ মুহূর্তটি সেই স্বপ্নকে সফল করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যান।
এই নিবন্ধতে আমরা নেতৃত্বের অধিকারী ব্যক্তির কিছু গুণাগুণের বিষয়ে আলোচনা করেছি। আপনার মধ্যেও যদি এই গুলি থাকে তাহলে আপনিও আগামীদিনের এক নেতা বড় নেতা হওয়ার ক্ষমতা রাখেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.