হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে এমসি বাণিজ্য: সহকারীর বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি !

অপরাধ

আল সাইমুম আহাদ, হবিগঞ্জ থেকে :
অর্থের বিনিময়ে তথ্য দিয়ে ভূয়া জখমী সার্টিফিকেট বাণিজ্যের মূলহোতা হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের নিরাপত্তা প্রহরী (আরএমও সহকারী) শাজাহানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার পর তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ডাঃ শ্যামল রঞ্জণ দেবনাথকে সভাপতি করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার এ কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, আরএমও ডাঃ মোমিন উদ্দিন চৌধুরী, ডাঃ মোহিনী, ডাঃ মিঠুন রায় এবং সিস্টার ইনচার্জ হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল।

জানা যায়, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অগোচরে দীর্ঘদিন ধরে এমসি বাণিজ্য চালিয়ে আসছিলেন নিরাপত্তা প্রহরী শাজাহান মিয়া। হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিরাপত্তা প্রহরী পদে চাকুরীরত থাকলেও বাড়তি উপার্জনের অসৎ উদ্দেশ্যে আরএমও সহকারী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন শাজাহান। এ সুবাদে তিনি নিয়ম বর্হিভূতভাবে সরকারী নির্দেশ উপেক্ষা করে কতিপয় কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতালের ভূয়া হাড় ভাঙ্গা এক্সরে এবং জখমী তথ্যের মাধ্যমে গুরুতর জখমী সনদ বানিজ্য শুরু করেন।

এ ব্যাপারে জনৈক ভুক্তভোগী বাদী হয়ে গত ২৯ জুন হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের তত্তাবধায়ক, সিভিল সার্জন হবিগঞ্জ, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটি এবং পুলিশ সুপার বরাবরে অভিযোগ দায়ের করেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বেশ কয়েক বছর আগে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রথমে অস্থায়ী ভাবে নিরাপত্তা প্রহরী পদে চাকুরীতে যোগদান করেন শাজাহান। চাকুরী স্থায়ী হবারপরই আরএমও অফিসে শুরু করেন বাণিজ্য। শাজাহানকে টাকা না দিলে খুজেঁ পাওয়া যায় না জরুরী নথি। টাকা না দিলে শুরু হয় নানা টালবাহানা, ‘আজ স্যার নেই, কাল আসেন’। ‘এমসি লেখতে দিছি, কাল হয়ে যাবে’ ইত্যাদি।

জরুরী মামলার তদন্তে অনেক পুলিশ কর্মকর্তাই জিম্মি হয়ে থাকেন তার কাছে। এদিকে, প্রাইভেট ক্লিনিকের কোন জখমী সনদ গ্রহণযোগ্য নেই এমন সরকারী নির্দেশনা থাকলেও মনগড়া তৈরি রিপোর্ট দিয়ে চলছে এ বাণিজ্য।

আরও জানা যায়, হবিগঞ্জ শহরের কয়েকটি প্রাইভেট ক্লিনিক হাসপাতলের কিছু দালালদের সাথে গোপন আতাত আছে শাজাহানের। গুরুতর জখমীর সার্টফিকেট দিতে সরাসরি কন্টাক নেন তিনি নিজে। তার পছন্দমত ক্লিনিক থেকে অন্যের হাড়াভাঙ্গা রিপোর্টের নাম পরিবর্তন করে তথ্য উপস্থাপন করেন জখমী রিপোর্টে।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক জনৈক কর্মকর্তা জানান, মামলার তদন্ত কাজে জখমী রিপোর্ট বা ডাক্তারী পরিক্ষার সনদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জখমী রির্পোটের জন্য বার বার তাগিদ দিলেও টাকা ছাড়া কোন কথায় কর্ণপাত করেন না শাজাহান। টাকা দিলেই কাজ হয়ে যায়। আর টাকা না দিলে শুনতে হয় নানা অযুহাত। অনেক ঘটনার সত্য জিনিসও কোথা থেকে হাওয়া হয়ে যায়। এতে অনকে মানুষ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হন।

হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের জনৈক কর্মচারী জানান, শাজাহান মূলত নিরাপত্তা প্রহরীর দায়িত্ব পালন করেন। তবে বাড়তি মুনাফা লাভের জন্য আছেন আরএমও অফিসের সহকারী হিসেবে।

তদন্ত কমিটির সভাপতি ডাঃ শ্যামল রঞ্জণ দেবনাথ জানান, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিশীঘ্রই ঘটনার তদন্ত করে সত্যতা উদঘাটন করা হবে। দোষী যে-কেউ হোক না কেন কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published.