বগুড়ায় প্রশাসনের হাজার অনুরোধের পরেও বিভিন্ন পয়েন্টে সাধারণ মানুষের জটলা

অন্যান্য

মতিন খন্দকার টিটু :
বাংলাদেশে কোভিড ১৯ বা করোনাভাইরাসের সংক্রমণের এখনো ১ মাস পূরণ হয়নি কিন্তু এই অল্প সময়েই শুধুমাত্র সাধারণ মানুষের অসচেতনতা এবং গোঁড়ামির জন্য দিন দিন এই অবস্থা ভয়ংকর রুপের দিকে যাচ্ছে। গতকাল রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মোট ৮৮ জন যার মধ্যে গতকাল ১ দিনেই আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ জন এবং এখন পর্যন্ত মারা গেছে মোট ৯ জন। দেশের এই পরিস্থিতিতে সকল মহল যখন আতঙ্কিত তখন হাজার অনুরোধের পরেও বগুড়ায় সাধারণ মানুষগুলোকে ঘরমুখী করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রশাসনের।

আমরা সারাদিন জীবাণু আর ভাইরাস লিয়েই থাকি ভাই করোনা আর কি করবি এমন এক উক্তি ছিল মাস্কবিহীন রাস্তায় চলাচলকারী মোমিন নামে এক রিক্সাচালকের আবার খেঁটে খাওয়া এক দিনমজুর বলছেন ‘ও ভাই একদিন কামাই না করলে বাড়িত ভাত হবিনা, ভাত যোগাড় করাই আমাগেরে কাছে বড় যুদ্ধ। মানষে খালি মাইকে হাত ধুবের কই আমাগেরে বাড়িত তো আর ওগেরে মতোন জমানো টাকা নাই যে ওডা ভ্যাঙ্গে খামু, তাই করোনা আমাগেরে মতোন গরীবোক মারবি না ভাই ওগলা টেনশন করিনা’ এমন কিছু মিশ্র প্রতিক্রিয়া শোনা যায় বগুড়া শহরের বিভিন্ন রাস্তা আর বাজারের ভীড়ে থাকা মানুষগুলোর কাছ থেকে।

জেলা ও উপজেলা প্রশাসন কর্মকর্তা, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ঘন ঘন টহল এবং হাজার অনুরোধের পরেও শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা ব্যতিত বড়গোলা, টিনপট্টি, ডালপট্টি, চেলোপাড়া, কৈপাড়া, সেউজগাড়ি, উপশহর, মালতিনগরসহ বিভিন্ন পয়েন্টেই গতকাল দেখা গেছে ছোট ছোট জটলা সবচেয়ে ভয়ংকর পরিস্থিতি ছিল শহরের ব্যস্ততম ফতেহআলীবাজার ও রাজাবাজারে।

আবার ত্রাণ নেওয়ার নামে বড় বড় নেতা আর জনপ্রতিনিধিদের বাড়ির সামনেও প্রতিদিন বাড়ছে সাহায্যপ্রার্থী মানুষদের সংখ্যা যার দরুণ ঝুঁকির মধ্যে পরছে সাধারণ এলাকাবাসী। সাথে আবার ছোট ছোট সিএনজি আর অটো তে একসাথে ৪/৫ জন যাত্রীর যাতায়াত তো চলছেই কোন কিছুর তোয়াক্কা না করেই। সামাজিক দূরত্ব আর সচেতনতাই যখন এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় তখন সবকিছু কে উপেক্ষা করে বাজারে যাচ্ছি, ঔষধ কিনতে যাবো জরুরী, হাসপাতালে যেতে হবে ইত্যাদি নানা অজুহাতে বাড়ির বাহিরে বের হওয়ার যেন হুজুক পরে গেছে সাধারণ মানুষের মাঝে আবার এদের মধ্যেই একশ্রেণীর অসচেতন মানুষ মাঝে মাঝে রাস্তায় বের হয় শুধুমাত্র মিলিটারি রাস্তায় অ্যাজকে আচ্চে নাকি সেডা দেখার জন্য।

ভাবতে পারেন আমাদের সমাজের একজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে আশেপাশের সবাই কিন্তু ঝুঁকিতে পরতে পারে কিন্তু কে শোনে কার কথা। করোনা ও বগুড়া পরিস্থিতি ফেসবুক গ্রুপের প্রধান সমন্বয়ক সংবাদকর্মী রাকিব জুয়েলের সাথে কথা বললে অত্যন্ত দু:খ ভারাক্রান্ত মনে তিনি জানান, বগুড়ায় ইতিমধ্যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে সেই সাথে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে এখনো আইসোলেশনে রয়েছেন বেশ কয়েকজন। এইরকম পরিস্থিতিতে শুরু থেকে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার অনেক প্রচেষ্টা করলেও এখন পর্যন্ত তাদেরকে শতভাগ ঘরমুখী করা যাচ্ছেনা যা সকলের জন্য হুমকীস্বরুপ।

সেই সাথে মাঠপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি থাকলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরো দৃশ্যমান কর্মকান্ড পরিচালনা এবং সর্বদা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে সন্মিলিতভাবে কাজ করার জন্যে তিনি অনুরোধ জানান। তিনি আরো বলেন, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাধারণ মানুষকে ঘরমুখী এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে কঠোর না হলে বগুড়ার পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে যা ভেবে ইতিমধ্যেই আতঙ্কিত অবস্থায় আছে সচেতন মানুষজন। এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সনাতন চক্রবর্তীর সাথে কথা বললে তিনি জানান, বাংলাদেশ পুলিশের কর্ণধার আইজিপি মহোদয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এবং জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বিপিএম (বার) এর নেতৃত্বে অত্যন্ত নমনীয়ভাবে দিন-রাত অনবরত বগুড়া জেলা পুলিশের সদস্যরা মাঠ পর্যায়ে তাদের সর্বোচ্চ ত্যাগ দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

সাধারণ মানুষকে ঘরমুখী করতে সত্যিই অনেকটা হিমশিম খেতে হচ্ছে পুলিশ সদস্যদের তবে তাদের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিতে সকল পরিস্থিতি মোকাবেলায় কোন ত্রুটি থাকবে না মর্মেও জানান তিনি। বগুড়ায় সাধারণ মানুষের এমন জটলা এবং আতঙ্কিত ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা বিষয়ে জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদের সাথে কথা বললে তিনি জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় সেবার সাথে জড়িত মানুষ বাদ দিয়ে সাধারণ মানুষকে ঘরমুখী এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে তাদের পক্ষ থেকে যথাসম্ভব পদক্ষেপ পরিচালনা করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর সদস্য ছাড়াও জেলা প্রশাসনের সকল ভ্রাম্যমান আদালত মাঠে রয়েছে যা আজ থেকে আরো কঠোর করা হবে তাও করোনার সংক্রমণ থেকে সকলকে সুরক্ষিত রাখাই এখন তাদের বড় চ্যালেঞ্জ বলে সকলকে সময় থাকতে সচেতন হওয়ার লক্ষ্যে অনুরোধ জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.