পাঁচ হাজার টাকায় মুচলেকায় জামিন পেয়েছেন নোবেলজয়ী ড.ইউনূস

অন্যান্য

ডেস্ক রিপোর্ট :
শ্রম আইনের ১০টি নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগে করা মামলায় পাঁচ হাজার টাকায় মুচলেকায় জামিন পেয়েছেন গ্রামীণ কমিউনিকেশনসের চেয়ারম্যান নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জামিন পেয়ে তিনি ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের কাঠগড়া থেকে সরাসরি প্রথম শ্রম আদালতের বিচারক শাহজাহানের খাসকামরায় যান। বিচারক তাকে দরজা থেকে রিসিভ করে ভেতরে নিয়ে যান। সেখানে তিনি ২৩ মিনিট অবস্থান করেন। তৃতীয় শ্রম আদালতে যাওয়ার আগেও প্রথম শ্রম আদালতের চেয়ারম্যানের খাসকামরায় ২৭ মিনিট অবস্থান করেন তিনি।

ড. ইউনূসকে খাসকামরায় ঢুকতে ও বের হতে দেখে অনেককে কানাঘোষা করতে থাকেন। বলতে থাকেন বিচারপ্রার্থী কিভাবে খাসকামরায় প্রবেশ করেন। বিচার কাজে প্রভাবিত হতে পারে বলে মনে করেন নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক অনেকেই।

এর আগে ৩ ডিসেম্বর তিনি জামিন নিয়ে প্রথম শ্রম আদালতের চেয়ারম্যানের খাস কামরায় অবস্থান করেছিলেন ড. ইউনূস।

সরেজমিনে দেখা যায়, আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকার প্রথম শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান শাহজাহান আদালতে উপস্থিত হন। এরপর ১০টা ৩১ মিনিটে ড. ইউনূস আদালতে উপস্থিত হয়ে গাড়িতে অবস্থান করেন। ১০টা ৩৫ মিনিটের দিকে তিনি গাড়ি থেকে নেমে ঢাকার প্রথম শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান শাহজাহানের খাস কামরায় যান। ১১টার দিকে সিঁড়ি দিয়ে আরেক তলা ওপরে উঠে তৃতীয় শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান রহিবুল আলমের আদালতে উপস্থিত হন ড. ইউনূস। ১১ টা ৬ মিনিটে আদালতে প্রবেশ করে মিনিটখানেক এজলাসের পেছনে চেয়ারে বসে ছিলেন। ১১ টা ৭ মিনিটের দিকে এজলাসের কাঠগড়ায় দাঁড়ান।

এ সময় তার আইনজীবী বলেন, এ মামলায় ড.ইউনূসের আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করা হয়েছিল। তিনি নির্ধারিত সময়ের আগেই আদালতে উপস্থিত হয়ে ও আত্মসমর্পণ করে জামিনের প্রার্থনা করেন। তিনি সম্মানিত ব্যক্তি আমরা তার জামিন চাই। এছাড়াও ডা. ইউনূসের ব্যক্তিগত হাজিরা মওকুফ চেয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরা আবেদন করেন আইনজীবী।

শুনানি শেষে তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক রহিবুল আলম বলেন, পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় তার জামিন মঞ্জুর করা হলো। আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরা যে আবেদন করা হয়েছে তা মঞ্জুর করা হলো। তবে তাকে মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন আদালতে উপস্থিত হতে হবে।

১১টা ১২ মিনিটের দিকে ডা. ইউনুস কাঠগড়া নেমে সরাসরি প্রথম শ্রম আদালতের চেয়ারম্যানের খাসকামরায় আবারও যান। ১১টা ৩৩ মিনিটের দিকে তিনি খাসকামরা থেকে বের হয়ে আদালত চত্বর ত্যাগ করেন।

এর আগে ১৩ জানুয়ারি ড. ইউনূসসহ তার প্রতিষ্ঠানের আরও তিনজনকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য এ সমন জারি করেন আদালত।

৫ জানুয়ারি শ্রম আইনের ১০টি নিয়ম লঙ্ঘন করায় ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে মামলা করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের শ্রম পরিদর্শক (সাধারণ) তরিকুল ইসলাম।

মামলার বিবাদীরা হলেন গ্রামীণ কমিউনিকেশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজনীন সুলতানা, পরিচালক আ. হাই খান ও উপ-মহাব্যবস্থাপক (জিএম) গৌরি শংকর।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, মামলার বাদী ২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর গ্রামীণ কমিউনিকেশনসে সরেজমিনে পরিদর্শনে যান। পরিদর্শনে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটির দ্বারা ১০টি বিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি দেখতে পান।

এর আগেও গত ৩০ এপ্রিল বাদীপক্ষের এক পরিদর্শক প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করে ত্রুটিগুলো সংশোধনের নির্দেশনা দেন। এরপর ৭ মে ডাকযোগে এ বিষয়ে বিবাদী পক্ষ জবাব দিলেও তা সন্তোষজনক হয়নি। পরে ২৮ অক্টোবর বর্তমান পরিদর্শক আবারও তা অবহিত করেন। নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করে বিবাদীরা ফের সময়ের আবেদন করেন। কিন্তু আবেদনের সময় অনুযায়ী তারা জবাব দাখিল করেননি।

এমতাবস্থায় বিবাদীরা বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬, বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন, ২০১৩ ধারা ৩৩ (ঙ) এবং ৩০৭ মোতাবেক দণ্ডনীয় অপরাধ বলে বাদী মনে করেন।

যে ১০টি বিধি লঙ্ঘন করেছে ড. ইউনূসের কোম্পানি

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর গত ১০/১০/২০১৯ খ্রি. তারিখে সরেজমিনে পরিদর্শনকালে বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬, বাংলাদেশ শ্রম আইন (সংশোধন) আইন ২০১৩ ও বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা ২০১৫ এর নিম্নোক্ত ১০টি লঙ্ঘন পরিলক্ষিত হয়। ড. ইউনূসের কোম্পানি এগুলো লঙ্ঘন করেছে-

১. বিধি মোতাবেক শ্রমিক/কর্মচারীদের নিয়োগপত্র, ছবিসহ পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বহি প্রদান করা হয়নি।

২. বিধি মোতাবেক শ্রমিকের কাজের সময় এর নোটিশ পরিদর্শকের নিকট হতে অনুমোদিত নয়।

৩. কোম্পানিটি বার্ষিক ও অর্ধবার্ষিক রিটার্ন দাখিল করেনি।

৫. কোম্পানির নিয়োগবিধি মহাপরিদর্শক কর্তৃক অনুমোদিত নয়।

৪. কর্মীদের বৎসরান্তে অর্জিত ছুটির অর্ধেক নগদায়ন করা হয় না।

৬. ক্ষতিপূরণমূলক সাপ্তাহিক ছুটি ও উৎসব ছুটি প্রদান-সংক্রান্ত কোনো রেকর্ড/রেজিস্টার সংরক্ষণ করা হয় না।

৭. কোম্পানির মুনাফার অংশ ৫% শ্রমিকের অংশগ্রহণ তহবিল গঠনসহ লভ্যাংশ বণ্টন করা হয় না।

৯. কর্মীদের অন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করালেও কোনো ঠিকাদারি লাইসেন্স গ্রহণ করেননি।

৮. সেফ্টি কমিটি গঠন করা হয়নি।

১০. কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর থেকে লাইসেন্স গ্রহণ করেনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.