গাজীপুরে ৫৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ভাই এর হাতে শিক্ষক লাঞ্চিত

অপরাধ

রবিউল আলম(ঢাকা)গাজীপুর প্রতিনিধি :
গাজীপুরের টঙ্গীর স্বনামধন্য ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সিরাজ উদ্দিন সরকার বিদ্যানিকেতন এন্ড কলেজে শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করার অভিযোগ উঠেছে ৫৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন সরকার ও মহানগর যুবলীগের আহবায়ক সদস্য আমান উদ্দিন সরকারের ছোট ভাই জামান সরকারের বিরুদ্ধে।

এঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন মহলে ছড়িয়ে পড়ায় টঙ্গী জুড়ে আলোচনা-সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় বইছে। অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন এর যথাযথ বিচার হওয়া উচিৎ। অন্যথায় যে কোন ব্যক্তি শিক্ষক সমাজের মান সম্মান হানি করতে দ্বিধাবোধ করবেনা।
গত ৩ জানুয়ারি দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হিসাব শাখায় এই ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটে।

সরজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, তুরাগ নদের তীর ঘেঁষে টঙ্গীবাজার এলাকায় প্রতিষ্ঠিত সিরাজ উদ্দিন সরকার বিদ্যানিকেতন এন্ড কলেজ। অত্র প্রতিষ্ঠানের সংরক্ষিত এলাকা হিসাব বিভাগ। যেখানে প্রতিষ্ঠানের সমস্ত অর্থ সংরক্ষিত থাকে। এখানে ইচ্ছে করলেই যে কেউ প্রবেশ করতে পারে না। গত ৩ ডিসেম্বর দুপুরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ঢুকে হিসাব বিভাগের মূল ফটকের সামনে আসে জামান। এসময় সে কাউকে কিছু না বলেই হিসাব বিভাগের ভিতরে প্রবেশ করতে চেষ্টা করলে ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ তাকে বাধা দেন। এতে জামান ওই শিক্ষকের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে তাকে হুমকী-ধামকী ও গালিগালাজ করতে থাকেন। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে বাক-বিতন্ডা ও কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে জামান ওই শিক্ষককে এলোপাতারি চড়-থাপ্পর মারেন। এসময় আশপাশের অন্য শিক্ষক-কর্মচারীরা এসে জামানকে শান্ত হতে বললে সে শিক্ষক আজাদকে দেখে নেওয়ার হুমকী দিয়ে চলে যান। শিক্ষক লাঞ্চিতের ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝর বইছে।

এলাকাবাসি জানান, টঙ্গী বাজার এলাকায় ফুটপাতে দোকান বরাদ্ধ, সাপ্তাহিক হাট-বাজার বসানো, সৃষ্ট জোট-ঝামেলার আচার-বিচারসহ এলাকার যাবতীয় ভালো-মন্দ বেশীর ভাগ কাজই হয় সরকার পরিবার কেন্দ্রিক। এসব দোকান-পাট থেকে খাজনার নামে মাত্রারিক্ত অর্থ আদায় করেন তাদের পরিবারের লোকজন কর্তৃক নিদের্শিত ব্যক্তিরা। অর্থ এবং ক্ষমতার কারনেই জামান সরকার এমন জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছে বলে তারা দাবি করেন।

ভুক্তভোগি শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হিসাব শাখায় প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত। ওই দিন দুপুরে তিনি হিসাব শাখায় প্রবেশ করতে চাইলে আমি বাধা দেই। পরে তিনি জোর করে প্রবেশ করে আমর সাথে অশালীন আচরন করেন। এঘটনার পর গত ১০ জানুয়ারি তিনি ও তার বড় ভাই স্থানীয় কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন সরকার স্কুলে এসে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

ঘটনার বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে মারামারির ঘটনা অস্বীকার করে অভিযুক্ত জামান সরকার বলেন, এমন কোন ঘটনা ঘটেনি। কথা কাটাকাটি হয়েছিল। পরে সমাধান করা হয়েছে।

অভিযুক্তের বড় ভাই কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন সরকার বলেন, এটা একটা ছোট-খাটো ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল। সাবেক পৌর মেয়র আজমত উল্লাহ খান এবং আমিসহ বসে বিষয়টি সমাধান করেছি।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক ফোরামের যুগ্ম আহবায়ক আজাহারুল ইসলাম বেপারী বলেন, যে দেশের প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করেন সেখানে একজন কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতার ভাই হয়ে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটাবে এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।
এ বিষয়ে সিরাজ উদ্দিন সরকার বিদ্যা নিকেতন এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ওয়াদুদুর রহমান জানান, বিষয়টা স্পর্শকাতর। আমার অফিস আর ক্যাশ দুটো ভিন্ন জিনিষ। আমার অফিসে সহজে ঢুকা যায় কিন্তু হিসাব বিভাগ সবচেয়ে সংরক্ষিত জায়গা হওয়ায় ওখানে কেউ অনুমতি ছাড়া ঢুকতে পারে না। আমার শিক্ষক নিষেধ করা সত্বেও ভিতরে ঢুকে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়ে যে পরিমান অপরাধ সে করেছে তা আসলে ক্ষমার অযোগ্য। তবে কাউন্সিলর সাহেব প্রতিষ্ঠানে এসে পরিবারের পক্ষ থেকে ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

যোগাযোগ করা হলে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এ্যাড. আজমত উল্লাহ খান বলেন, বিষয়টি প্রাথমিক ভাবে সমাধান করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর জেলা শিক্ষা অফিসার রেবেকা সুলতানা জানান, ঘটনাটি আমার জানা নেই। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব।

Leave a Reply

Your email address will not be published.