গত ৬ মাসে দেশে রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৩১ হাজার কোটি টাকা। 

অর্থনীতি

ডেস্ক রিপোর্ট :
২০১৯-২০২০ অর্থবছরের ৬ মাস শেষে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি ৭.৩৯ শতাংশ হলেও বড় ধরণের ঘাটতির মুখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। 

যদিও গত অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের একই সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ৬.৩৯ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত (৬মাস) রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৩১ হাজার কোটি টাকা। 

এনবিআরের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, জুলাই-ডিসেম্বর ৬ মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৩৬ হাজার ৬৬৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। যার বিপরীতে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ হাজার ৫ হাজার ১৬১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৩১ হাজার ৫০৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা কম।

আর আদায়ের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি আয়করে ৮১.৪৬ শতাংশ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে এনবিআর। এরপরই ভ্যাটের অবস্থান। ভ্যাটে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৭৯.০৩ শতাংশ আদায় হয়েছে। সবচেয়ে কম ৭০.৪৬ শতাংশ আদায় হয়েছে শুল্কে।

দেখা যায়, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছর আয়কর আহরণে বেশ আশা জাগাচ্ছে। অর্থবছরের ৬ মাসে আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাটে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১৩.৬৬ শতাংশ, ১.৯৬ শতাংশ ও ৭.০৬ শতাংশ।

ছয় মাসে আমদানি-রপ্তানি পর্যায়ে রাজস্ব আদায়  হয়েছে ৩১হাজার ৪২৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা, স্থানীয় পর্যায়ে ভ্যাট ৪১ হাজার ৯০ কোটি ২২ লাখ টাকা ও আয়কর-ভ্রমণ করে ৩২ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা। যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৭৬.৯৫ শতাংশ আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। 

আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবসের সেমিনারে অর্থমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, আগামী পাঁচ বছরে রাজস্ব আদায় কয়েকগুণ বাড়বে। এতে দেশে উন্নয়ন গতিশীল হবে। সব বন্দরে স্ক্যানিং মেশিন বসানো হবে। ব্যবসা বাড়ানোর জন্য বন্দরে পণ্য জট কমাতে হবে। বন্দর গতিশীলে এনবিআরকে বিশেষ নজর দিতে হবে।  

এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এ বছর রাজস্ব আদায়ে একটু পিছিয়ে আছি। বড় ঘাটতি হলেও ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। তবে বিগত পাঁচ বছরে প্রায় ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কম অর্জন নয়।

রাজস্ব আদায়ের বিষয়ে পরিসংখ্যানে আরো দেখা যায়, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে অর্থাৎ জুলাই-নভেম্বর ১৯ পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৮১ হাজার ৯২০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৫ মাসে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা। আর রাজস্ব আদায়ের গড় প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।

উল্লেখ্য, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের শেষ ছয় মাসে সোয়া এক লাখ কোটি টাকা আদায় হয়। আর গোটা অর্থবছরে মোট রাজস্ব আদায় হয় প্রায় দুই লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকা। এতে ঘাটতি ছিল ৫৬ হাজার কোটি টাকা। এমন ঘাটতির মুখে এনবিআরকে চলতি অর্থবছরে সোয়া তিন লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়। এর মধ্যে ভ্যাট খাতে সর্বোচ্চ এক লাখ ১৭ হাজার ৬৭১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়। আর আয়কর খাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এক লাখ ১৫ হাজার ৫৮৮ কোটি ১৬ লাখ ও শুল্ক খাতে ৯২ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়।

চলতি অর্থবছর রাজস্ব আহরণ বিগত ২৬ বছরের মধ্যে সর্বনিন্ম পর্যায়ে পৌঁছেছে। চলতি অর্থবছর নভেম্বর মাস পর্যন্ত রাজস্ব আহরণ প্রবৃদ্ধি হয় পাঁচ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ। অক্টোবর মাস পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি হয় চার দশমিক ৩৩ শতাংশ, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছিল দুই দশমিক ৬২ শতাংশ, আগস্ট পর্যন্ত তিন দশমিক ৩৫ শতাংশ ও জুলাই মাস শেষে প্রবৃদ্ধি হয় ১২ দশমিক ৫৩ শতাংশ। অর্থাৎ জুলাই মাস ছাড়া বাকি চার মাসে প্রবৃদ্ধি পাঁচ অঙ্কের ঘর পার করতে পারেনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.