কুমিল্লা সিটিতে চলছে ট্রাফিক পুলিশ সহ ভূইফোঁড় শ্রমিক সংগঠনের নামে বেপরোয়া চাঁদাবাজি

অপরাধ

এম শাহীন আলম :
কথায় বলে পুলিশ জনগণের বন্ধু কিন্তু অসৎ কিছু পুলিশের কারণে পুরো পুলিশ জাতিকে এর দায় নিতে হয়। তেমনি কুমিল্লা নগরীর ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজির কারণে অতিষ্ট সিটিতে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহনের চালকরা। অনুসন্ধান কালে জানা যায়, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে সরকারী নিয়ম অনুযায়ী প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যগণকে ডিউটিরত অবস্থায় দেখা যায়। এ সময়ের মধ্যে কিছু সংখ্যক অসাদু ট্রাফিক পুলিশ ও সার্জেন্ট সদস্য তাদের নিজেদের আখের গোছানোর জন্য শহরে চলাচলকারী যানবাহনে চালকদের বিভিন্নভাবে বেকায়দায় ফেলে প্রতিদিন প্রকাশ্যে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এসব হয়রানীর সাথে ট্রাফিক সার্জেন্টদের সহযোগিতা করে আসছে তথা কথিত সোর্স নামে দালালরা সহ ভুইফোঁড় শ্রমিক সংগঠনের নেতাসহ চাঁদাবাজরা বিভিন্ন মোড়গুলোতে ট্রাফিক সার্জেন্টের নির্দেশে রাস্তায় চলাচলকারী গাড়ী আটক করে জোর পূর্বক গাড়ি চালকদের কাছ থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে কাগজপত্র নিয়ে আসে। এরপর শুরু হয় প্রতিদিনের ন্যায় অভিনব কায়দায় হুমকি দমকি দিয়ে চাহিদা অনুযায়ী টাকা নেওয়ার মহা-উৎসব এভাবে চলেছে প্রতিনিয়ত। আরো জানা যায়, চালকরা যখন টাকা না দিয়ে প্রতিবাদ করে তাৎক্ষনিক চালকদের গায়ে লাঠি চার্জ করে তাদের আহত করা হয়। এছাড়াও সোর্স নামের লেওয়ারা যখন গাড়ি থামানোর জন্য গাড়ি সংকেত দেয় যদি তখন গাড়ি চালকরা গাড়ি না থামায়, তখন তারা তাদের হাতের লাঠি দিয়ে গাড়ির গ্লাস ভাংচুরসহ চালকদের শরীরে হাত তোলতে দ্বিধাবোধ করে না। তখন তাদের আচরণে তাৎক্ষনিক সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মতই ব্যাপারটি মনে হয়। জানা যায়,এসব হয়রানীর ব্যাপারে যদি কোন চালক প্রতিবাদ করতে যায় তখন ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্ট তার গাড়ির বিরুদ্ধে একাধিক মামলা জরিয়ে দেয়। এই কারণে বেশির ভাগ চালকরাই বাধ্য হয়ে কোন প্রকার বাড়াবাড়ি না করে আপোষের মাধ্যমে টাকা দিয়ে ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্ট থেকে রক্ষা পায়। অনুসন্ধানে জানা যায়, নগরীর বিশেষ করে টমছমব্রীজ, পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড চৌরাস্তার মোড় এবং ফ্লাইওভারব্রীজের নিচে,চকবাজার, কান্দিরপাড়, শাসনগাছা এই পাঁচটি পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশের হয়রানী এবং চাঁদাবাজি চরমে। পদুয়ার বিশ্বরোড এলাকায় প্রতিদিনেই বড় বড় গাড়ী থেকে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজির দৃশ্য চোখে পড়ার মত।
এই রিপোর্ট লেখার সময় নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে বেশ কয়েকজন সিএনজি ও ইজিবাইক এর ভুক্তভোগি চালকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত মাসের মাঝামাঝি কান্দিরপাড় মোড়ে লিটন নামের এক সিএনজি চালক দৈনিক শ্রমিককে জানান, তিনি চকবাজার থেকে টমছমব্রীজ রোডে গাড়ীতে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছিল, তখন ট্রাফিক পুলিশ গাড়ী সিগন্যাল দিয়ে থামিয়ে তার গাড়ী থেকে যাত্রী নামিয়ে কান্দিরপাড় ট্রাফিক বক্স এর সামনে গাড়িটি নিয়ে আসে এবং আমাকে ট্রাফিকের সাথে থাকা দালালরা বিভিন্ন অঙ্কের টাকা দাবী করে। আমি দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে আমার গাড়ী ট্রাফিক অফিসে নিয়ে যায়। তারপর আমি আমার গাড়ীর মালিক কে অবগত করি। তখন তিনি ট্রাফিক পুলিশের এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানায়, গাড়ী পুলিশ লাইনে আছে, ঐ জায়গা থেকে জরিমানা দিয়ে নিয়ে আসেন। গাড়িটির মালিক পুলিশকে কে জিজ্ঞেস করে, আমার গাড়ীর অপরাধ কি, আমার তো সব কাগজপত্রই ঠিক আছে, তাহলে আমার গাড়ী আটক করলেন কেন? এর জবাবে তিনি জানান, এখন এত কথার উত্তর দেওয়ার সময় নেই, গাড়ী এভাবে ছাড়া যাবে না, গাড়ী পুলিশ লাইন থেকে নিয়ে আসেন। গত কয়েকদিন আগে দুপুর বেলা টমছমব্রীজ পুলিশ বক্সের সামনে শাহ আলম নামের এক ইজিবাইক চালক জানায়- আমার ইজিবাইকটি আটক রেখে আমাকে ২,০০০ টাকা জরিমানা দেওয়ার জন্য বলে ট্রাফিকের এক সার্জেন্ট। তখন আমার কাছে এত টাকা না থাকায় আমি সাংবাদিক শাহীন ভাইকে ফোন দেই, তিনি তাৎক্ষনিক সার্জেন্ট কে ফোন দেন, তাদের দুইজনের কথা বলার পর সার্জেন্ট আমাকে জানায়, যেই ফোন দেক না কেন, জরিমানা না দিয়ে গাড়ী ছাড়া হবে না। তখন আমি বলি, স্যার, আমার কাছে তো এত টাকা নেই, তখন সে আমাকে বলে- কমপক্ষে ৫০০ টাকা লাগবে। তখন আমি তাও দিতে না পারায় দালাল দিয়ে আমার পকেট চেক করে ৩৩০ টাকা পায়। তখন এই ৩৩০ টাকা রেখে আমার গাড়ী ছেড়ে দেয়। এরপর হুমকি দেয়- এব্যাপার যদি সাংবাদিক কে জানাও তাহলে তোমার খবর আছে। এই কথা বলার পর আমি এই ঘটনার বিষয় দৈনিক শ্রমিককে অবহিত করি। আরও কয়েকজন সিএনজি চালক জানায়, একটি গাড়ি রোডে ট্রাফিক পুলিশে ধরলে কমপক্ষে ২/৩ হাজার টাকা দিতে হয় তাদের। আর যদি গাড়ি পুলিশ লাইনে নিয়ে যায় তাহলে ৩/৫ হাজার তো দিতেই হয়। চালকরা জানায়, পেটের দায়ে গাড়ি চালাই, যেভাবে ট্রাফিক পুলিশী হয়রানীর শিকার হতে হয় মন চায় গাড়ি চালানো বন্ধ করে দেই। তারপরও নিরুপায় হয়ে গাড়ি চালাতে হয়। সিএনজি চালকরা আরো জানায়, শহরে গাড়ী নিয়ে ঢোকার অনুমতি থাকলেও বিভিন্ন দালালদের মাধ্যমে ট্রাফিক পুলিশকে নির্দিষ্ট হারে প্রতিদিনই চাঁদা দিতে হয়। তারা আরো জানায়, টাকা দেওয়ার পরও প্রায় সময় অনেক গাড়ী পুলিশ লাইনে নিয়ে যায় এবং ২/৩দিন আটক রাখার পর প্রায়ই গাড়ী বিনা রশিদে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা রেখে গাড়ীগুলো ছেড়ে দেয়। তাৎক্ষনিক টাকা দিলেই অবৈধ গাড়িগুলো বৈধ হয়ে যায়। সাধারণ মানুষের অভিযোগ- কুমিল্লায় যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকা নাজুক। রাস্তায় নামলে দেখা যায়- ট্রাফিক পুলিশ যানজট নিরসনের নামে তারা যানবাহনের চালকদের কারণে অকারণে প্রতিনিয়ত হয়রানী করে আসছে। এই হয়রানী থেকে চালক এবং যাত্রীরা পরিত্রাণ চায় এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, কুমিল্লা জেলা সিটি শহর হওয়াতে জেলার বিভিন্ন থানা থেকে সরকারী, বেসরকারি হাসপাতাল, ইপিজেড এই সমস্ত জায়গায় মানুষ গাড়িতে করে আসতে হয় কিন্তু গাড়িগুলো যাত্রী বা মালামাল নামিয়ে তাদের গন্তব্যে যাত্রার পথে যদি কোন অবস্থায় ট্রাফিক পুলিশের সামনে পড়ে যায় তখন ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি গুলো আটক রেখে একাধিক মামলার ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নেয় টাকা। তাৎক্ষনিক টাকা না দিলে গাড়িগুলোকে একাধিক মামলায় জরিয়ে দেওয়ার মতো দৃশ্য প্রতিনিয়ত লক্ষ্য করার মতো, আর যদি কোন গাড়ির নাম্বার না থাকে তাহলো তো কথাই নেই। ট্রাফিক পুলিশের চাহিদা মতো চালকদের কাছ থেকে টাকা আদায়। টাকা না দিলে সোজা পুলিশ লাইন ট্রাফিক অফিসে গাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। এই বিষয়ে প্রমাণ দেখতে গেলে পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড, টমছমব্রীজ, শাসনগাছা, চকবাজার এলাকায় দাঁড়িয়ে এই রকম অহরহ হয়রানীর দৃশ্য দেখা যায়।

অন্য দিকে সিএজি অটো রিক্সায় ট্রাফিক পুলিশের মাসিক টোকেন চাঁদাবাজীর পাশাপাশি প্রতিদিন নগরী কান্দিরপাড়,শাসনগাছা,চকবাজার,রাজগঞ্জ,টমচমব্রীজ,জাঙ্গালিয়া,পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এসব স্ট্যান্ড গুলোতে কিছু ভূইফোঁড় সংগঠনের নামে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে দৈনিক চাঁদাবাজি তো বিভিন্ন পরিবহণের চালকদের নিত্যদিনের সঙ্গী, রাস্তায় নামলেই দৈনিক জিবির টাকা নামের, শ্রমিক কল্যাণের নামে, পুলিশের নামে সহ দেদারছে চলছে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজীর মহা-উৎসব,যা বর্তমানে অনুসন্ধান চলছে নিখুঁত ভাবে
পরবতী অনুসন্ধানে পরের সংখ্যায় ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.