কুমিল্লায় ইমামের চিকিৎসার জন্য সাহায্য চাওয়ায় মুসল্লিদের ওপর হামলা, আহত ১০

অপরাধ

বিশেষ প্রতিনিধি :
কুমিল্লা নগরীর একটি মসজিদে অসুস্থ ইমামের চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা চাওয়াকে কেন্দ্র করে মুসল্লিদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) জুমার নামাজের পর নগরীর হযরত পাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে ওই এলাকার থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

জানা যায়, হযরতপাড়া গাউছিয়া জামে মসজিদের ইমাম ও খতিবের চিকিৎসার জন্য মসজিদ কমিটি ও এলাকাবাসীর সহযোগিতা চায়। বিষয়টি নিয়ে প্রথমে মসজিদের ভেতরে হট্টগোল শুরু হয়। পরবর্তীতে মসজিদের বাইরে দা-হাতুড়ি নিয়ে হামলা ও লুটপাট শুরু হয়। খবর পেয়ে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার চকবাজার ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

আহতদের মধ্যে ১০ জন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, নগরীর ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের হযরতপাড়া গাউছিয়া জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা কাওসার আহমেদ দীর্ঘদিন যাবত হৃদরোগে আক্রান্ত। চিকিৎসক তার হার্টে রিং পরানোতে বলেছেন। তবে ইমামের পক্ষে এতো ব্যয়বহুল চিকিৎসা করানো সম্ভব না।

এজন্য মসজিদ কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক ওই এলাকার মৃত আলেক হোসেনের ছেলে জামাল আহমেদসহ কমিটির অন্য সদস্যদের সহযোগিতা চান ইমাম।
এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে আরো জানা যায়, গতকাল জুমার নামাজে খুতবার পর জামালসহ অন্যরা মুসল্লিদের কাছে ইমামের জন্য সহযোগিতা চাইলে মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি হাবিবুর রহমান ক্ষিপ্ত হন। এরপরই মসজিদে হট্টগোল তৈরি হয়। তখন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের স্থানীয় কাউন্সিলর শওকত আকবর উভয় পক্ষকে বুঝিয়ে জুমার নামাজ পড়ার পরিবেশ তৈরি করেন। নামাজ শেষে মসজিদের বাইরে জামালসহ অন্য মুসল্লিদের ওপর সেক্রেটারি হাবিবুর রহমানের ছেলে আশিকুর রহমান (৩২), রিফাত (২৮) দা-ছেনি নিয়ে হামলা করে।

তা ছাড়া নিয়াজ নামে এক মুসল্লির হাতে দা দিয়ে আঘাত করলে তার হাত কেটে যায়। এ সময় মসজিদের মুসল্লিরা আতঙ্কে দৌঁড়োদৌঁড়ি শুরু করে।
এলাকাবাসী জানায়, এরপর হাবিবুর রহমানের লোক হিসেবে পরিচিত ওই এলাকার মৃত মুসলিম মিয়ার ছেলে আরিফ, রফিক মিয়ার ছেলে শাফিন, বাবুল মিয়ার ছেলে শাকিলসহ কয়েকজন জামালের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় তার বাড়ির দরজা, জানালা ভেঙে আলমারির আসবাবপত্র লুটপাট করে পালিয়ে যায় তারা। পুলিশ ঘটনাস্থল এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং একটি ধারালো ছেনি উদ্ধার করে।

স্থানীয় কাউন্সিলর শওকত আকবর বলেন, মসজিদের ইমামের সহযোগিতা চাওয়া নিয়ে এ সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে। সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হন। কয়েকটি বাড়িঘরও ভাঙচুর-লুটপাট করা হয়। ঘটনাটি দুঃখজনক।

আহত নিয়াজের স্ত্রী জাহানারা বেগম বলেন, ইমাম সাহেবের অসুস্থতার বিষয় নিয়ে মসজিদে কথা কাটাকাটি হয়। নামাজের পর হাবিবের নেতৃত্বে তার দুই ছেলে অন্য এলাকার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে অনেক মুসল্লিদের ওপর হামলা করে। এতে আমার স্বামীর হাত ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে ফেলে। আমি প্রশাসনের কাছে হামলাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি চাই।

এ বিষয়ে জানতে হাবিবুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

কোতয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন বলেন, ইমাম সাহেবের বিষয় নিয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্তের পর উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.