কুমিল্লার আঞ্চলিক রাস্তা গুলোতে চলছে জিবি’র নামে চাঁদার মহা-উৎসব

অপরাধ

বিশেষ প্রতিনিধি :
না আছে সরকার নির্ধারিত জায়গায় স্ট্যান্ড সুবিধা বা যাত্রী ছাউনি, না আছে ইজারাদাতা প্রশাসন কর্তৃক ধার্যকৃত টোল আদায়ের সঠিক কোন নির্দেশনা! কোন গাড়ি থেকে টোল আদায় হবে কোনটা টোল ফ্রী সেসব বিষয়েও নেই সঠিক নিয়মাবলি! নেই আইন কানুন বা নিয়মের কোন বালাই। অনিমই দিনে দিনে নিয়ম হয়ে উঠেছে যেন! একই সড়কের একাধিক স্পটে রাস্তার মোড়ে মোড়ে সড়কের ওপরই আদায় করা হচ্ছে জিপি নামের চাঁদা। কোথাও কোথাও যতসামান্য রাজস্ব আয় হলেও আদায় করা হয় কয়েকগুণ বেশী। লেবার কোর্ট ও হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গরিব খেটে খাওয়া পরিবহন শ্রমিকদের কষ্টার্জিত ঘামের পয়সা পথে পথে লুটে নিচ্ছে গুটি কয়েক লোক! আবার শ্রমিক সংগঠন, নেতা ও থানা পুলিশের নাম ভাঙ্গীয়ে প্রতিটি থানা এলাকার রয়েছে আলাদা আলাদা মাসিক টোকেন। থানা ভেদে মাসিক এসব টোকেন ১৫০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত। উন্নয়নশীল থেকে উন্নত দেশের আর কোথাও এমন নিয়মহীন চাঁদা আদায় হয় কি? শ্রমিকের ঘামের পয়সায় ভাগ বসানো এসব টাকার কতটা জমা হয় রাষ্ট্রের কোষাগারে আর কতটাই বা যায় বেহিসেবী খাতায়? ছোট ছোট পরিবহনের শত সহস্র দরিদ্র শ্রমিকের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের টাকায় আয়েসি জীবন কাটায় গুটিকয়েক ধনী নেতারা । আর এই জিবি বা টোলের জাতাঁকলে শ্রমিকদের পাশাপাশি অতিরিক্ত ভাড়ার চাপে পিষ্ট হচ্ছে যাত্রীরাও। প্রকাশ্যেই চলা এত সব অনিয়মের সব দেখে শুনে বুঝেও যেন বেড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধার নেই কেউ। থাকবেই বা কি করে, সরিষার ভুত ওঝাদের ওপরেও চেপে বসেছে হয়তোবা। তিল পরিমান রাজস্ব আয়ের হিসেব দেখিয়ে তাল পরিমান লুটের হিসেব থাকে বেহিসেবের খাতায়। ইজারার দোহাই দিয়ে কিংবা কোন প্রকার ইজারা ছাড়াই নেতা ও পুলিশের নাম ভাঙ্গীয়ে বেপরোয়া ভাবে নিরীহ খেটে খাওয়া পরিবহন শ্রমিকদের ওপর চলছে এই জিপি বা টোলের স্টিমরোলার। সড়কে যাত্রী থাকুক বা না থাকুক শ্রমিকের পেটে খাবার জুটুক বা নাজুটুক সড়কের মোড়ে মোড়ে চাঁদা দিতেই হবে। দিনভর কায়িক শ্রম দেয়া শ্রমিক উপোষ থাকলেও উপোষী শ্রমিকের চামড়া ছিলে আদায় করা জিপি ও চাঁদার টাকায় উদরপূর্তি হয় কিছু মানুষের।

কুমিল্লার বুড়িচং ব্রাহ্মণপাড়া দুটি উপজেলার আয়তন মোট ২৯১ বর্গ কিলোমিটার। শহরতলীর গ্রামীন জনপদের দুই উপজেলার প্রধান সড়কগুলো সিএনজি অটোরিকশা ঘুরলে একটি তিনচাকার ছোট এই পরিবহন কে কোথায় কত টাকা চাঁদা দিতে হয়? কংশনগর -৩০টাকা, রামপুর- ২০ টাকা, নিমসার থেকে কংশনগর – ৫০, নিমসার থেকে বরুড়া সড়ক-৩০, কাবিলা -২০, আবিদপুর -২০, কংশনগর বেড়ি বাধ ২০ বারেশ্বর ১০, বুড়িচং বাজার-৪০, শংকুচাইল – ২০, ফকির বাজার -২০, সাধকপুর – ২০, ভরাসার -২০, কালিকাপুর -৪০, রাজাপুর – ৪০, ব্রাহ্মণপাড়া বাজার -৩০, ওলুয়া -আসাদনগর -২০, চালনা -২০, মিরপুর -২০ বরধশিয়া -১০, দুলালপুর – ২০, বাঘরা – ৮০, গোপাল নগর -২০ টাকা । পিকাপ বা ট্রাকের চাঁদার হিসেব আলাদা।
অর্থাৎ দুটো উপজেলার প্রধান সড়কে একটি সিএনজির চাকা ঘুরলে দিতে হবে ৬০০টাকা চাঁদা!!
শ্রমিক নেতা ও চালকদের তথ্য মতে দুটো উপজেলার বিভিন্ন সড়কে নাম্বার সহ এবং নাম্বার বিহীন মোট সিএনজি চালিত অটোরিকশা রয়েছে আনুমানিক ৪সহস্রাধীক আর ব্যটারী চালিত অটোরিকশা রয়েছে আনুমানিক ২ সহস্রাধীক।

দুই উপজেলার যে সড়কেই চালাচল করুক না কেন গড়ে একটি সিএনজি অটোরিকশাকে নূন্যতম ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। দিনে একজন চালক সর্বোচ্চ ১২শ থেকে ১৪ শত টাকা আয় করতে পারেন । এ থেকে মালিককে দিতে হয় ৫০০টাকা, ৩০০ টাকা গ্যাস, সারাদিনে খাবার সহ নিজের খরচ রয়েছে ১৫০ টাকা এরপর জিবি বা চাঁদা ১৮০-২০০ টাকা বাদ দিলে পরিবারের বাজার খরচ জোগাড়ই কষ্টস্বাধ্য হয়ে পরে। একই সড়কের ৬ থেকে ৮টি স্পষ্টে দিতে হয় জিবি বা চাঁদা! এ যেন নীল চাষীদের থেকে বৃটিশদের কর আদায়কেও হার মানায়। তাই নয় কি?

এই জিবি নামের জাঁতাকল থেকে মুক্তি পেতে চট্রগ্রাম লেবার কোর্ট, হাইকোর্ট ও জজকোর্টে অটো সিএনজি শ্রমিক নেতারা একাধিক মামলা করে ইজারার বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ জারি করালেও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই দেয়া হচ্ছে ইজারা। আর ২০১০ সাল থেকে শুরু এসব ইজারা দেয়ার পেছনেও রয়েছে সরকার দলীয় নেতাকর্মী এবং উপজেলা প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা কর্মচারীর অদৃশ্য স্বার্থ। এমন চিত্র শুধু বুড়িচং ব্রাহ্মণপাড়ায বেশী হলেও আশেপাশের কয়েকটি উপজেলার চিত্রও প্রায় একই।কুমিল্লা আদর্শ সদর ও দেবিদ্বারের বিভিন্ন এলাকায় ইজারা ছাড়া চলছে প্রকাশ্যই এমন চাঁদাবাজি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.