ভোলার মনপুরা’য় এতিমখানা সুপারের বিরুদ্ধে এতিমের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

অপরাধ

এতিমখানা সুপার বলছে সমাজ সেবা সহ সবাইকে ম্যানেজ করেই প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছি

এম শাহীন আলম :
দ্বীপ জেলা ভোলার সকল উপজেলায় সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি প্রায় শতাধিক বেসরকারি এতিমখানা চলমান রয়েছে। এসব বেসরকারি এতিমখানায় অধিকাংশ ভুয়া এতিম শিশু সনদ দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে মনপুরা উপজেলা সহ একাধিক উপজেলার এতিমখানা সুপারের বিরুদ্ধে। সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায়,অধিকাংশ ছাত্রদের মা-বাবা থাকলেও অনেক মাদ্রাসা ছাত্রদের এতিম পরিচয়ে এতিমখানায় তাদের ভর্তি দেখিয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের জেলা ও উপজেলা কমর্কর্তাদের যোগসাজশে নগদ অর্থের মাধ্যমে রফা করে এদের নামে সরকারি অর্থ বরাদ্ধ বাস্তবায়ন অব্যাহত রয়েছে। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ইতিমধ্যে ভোলা জেলার বিভিন্ন উপজেলার বেশ কয়েকটি এতিমখানার বরাদ্দ বন্ধ ও কমিয়ে দিয়েছেন জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর। ভোলা জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের বিশেষ সূত্র মতে জানা যায়, তাদের তালিকা অনুযায়ী ভোলা জেলার ৭টি উপজেলায় প্রায় ২৫টিরও বেশি বেসরকারি এতিমখানা রয়েছে। ২৫টি এতিমখানার অসহায় দুস্থ্য এতিম শিশুর জন্য দেওয়া হয় জন প্রতি মাসে ২ হাজার টাকা করে। এসব এতিমখানা গুলোর বছরে সরকারি বরাদ্দ রয়েছে কোটি টাকার বেশি । এতিমখানার অধিকাংশই মাদ্রাসাভিত্তিক লিল্লাহ বোর্ডিং ও সাথে এতিমখানা অন্তর্ভক্ত। সরেজমিনে তথ্য অনুসন্ধানকালে স্হানীয় লোকজনের সাথে কথা বললে তারা জানান, ভোলার মনপুরা উপজেলার সাকুচিয়া দক্ষিণ ইউনিয়নের সাকুচিয়া আবদুর রহমান সিকদার দারুল উলুম কওমী মাদ্রাসা ও এতিমখানার সুপার শিহাব উদ্দিন এতিমের টাকা লুটপাট করে চলছে গত কয়েক বছর ধরে, স্হানীয়রা বলেন, এতিমের নামে ভূয়া সনদ বানিয়ে টাকা তুলে অন্য খাতে খরচ করাটা সম্পূর্ণ বেআইনি। সরেজমিনে অনুসন্ধানে আবদুর রহমান সিকদার দারুল উলুম কওমী মাদ্রাসাটিতে তেমন ছাত্র উপস্থিত দেখা যায়নি,স্হানীয় লোকজন ভাষ্য অনুযায়ী এবং সরেজমিনে জানা যায়,শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে চলছে মাদ্রাসাটির কার্যক্রম। মাদ্রাসাটিতে কিছু এতিম রয়েছে বিধায় তা জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের অর্ন্তভুক্ত করা হয়। এতিমদের বিষয়ে মাদ্রাসার প্রধান সুপার (মুহতামিম) শিহাব উদ্দিন এর সাথে কথা বললে তিনি জানান-আমাদের মাদ্রাসাতে বহু এতিম রয়েছে তার মধ্যে ৬০জন এতিম রয়েছেন এবং প্রতিমাসে ভোলা জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে কিস্তি ভিওিতে জনপ্রতি এতিমের জন্য দুই হাজার টাকা করে সর্বমোট একলক্ষ বিশহাজার টাকা সরকারি অনুদান আসে। অথচ সরেজমিনে ব্যাপক অনুসন্ধানে ভোলা জেলার মনপুরা উপজেলার সাকুচিয়া দক্ষিণ ইউনিয়নের সাকুচিয়া আবদুর রহমান সিকদার দারুল উলুম কওমী মাদ্রাসা ও এতিমখানা’য় মাত্র ১৫-২০ জন এতিমের হদিস পাওয়া যায়। বাকী ৪০জন এতিম ছাত্রের নামে ভুয়া সনদে নাম ঠিকানা ব্যবহার করে প্রতিমাসে সরকারি অনুদান বাবদ ৮০হাজার টাকা লুটপাট করার অভিযোগ উঠেছে আবদুর রহমান সিকদার দারুল উলুম কওমী মাদ্রাসা ও এতিমখানা সুপার শিহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে এতিমখানার সুপার (মুহতামিম) শিহাব উদ্দিনের সাথে কথা বললে তিনি জানান-আমি এসব বিষয়ে কোন প্রকার বক্তব্য দিতে পারবো না,আপনি সমাজ সেবা স্যারের সাথে কথা বলুন,আমি সকলকে ম্যানেজ করেই দীর্ঘ সময় ধরে মাদ্রাসাটি চালিয়ে যাচ্ছি,শিহাব উদ্দিন উপজেলা সমাজ সেবা অফিসারের দোহাই দিয়ে বার বার তার নিজের অনিয়মের দ্বায়ভার পাশ কাটার চেষ্টা করেন । সরেজমিনে পুরো মাদ্রাসার চিত্র যেন সম্পূর্ণ ভিন্ন মাএা লক্ষ্য করা যাচ্ছিল,প্রতিষ্ঠানটিতে ১৫ – ২০ জন ভাতাভোগী এতিম থাকলেও বাস্তবেও এতিমদের পাওয়া যায়নি। ভোলা জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নজরুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন-তাদের নিয়ম অনুযায়ী, যাদের মা-বাবা বা শুধু বাবা নেই তারা বরাদ্দ পাবে। কোন এতিমখানার সুপারগন যদি তাদের এতিমখানার এতিমদের ভুয়া তথ্য দিয়ে এতিমের টাকা নিজেরা সুবিধাভোগ করার জন্য জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে তালিকা দিয়ে থাকেন তাহলে ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ড বাতিলসহ পূনরায় টাকা ফেরত আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আবদুর রহমান সিকদার দারুল উলুম কওমী মাদ্রাসা ও এতিমখানা’র বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে আশ্বস্হ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.