Doinik Bangla Khobor

দেশ ও বিদেশে চাকুরীর প্রলোভনে শতাধিক নারীর ভার্চুয়াল মেডিকেলের নামে গোপন ভিডিও ধারণ

মোঃরফিকুল ইসলাম মিঠু :
দেশ ও বিদেশে চাকুরীর প্রলোভনে শতাধিক নারীর ভার্চুয়াল মেডিকেলের নামে গোপন ভিডিও ধারণ করে ব্যালকমেইলিং এর মাধ্যমে অর্থ আদায়ের অভিযোগে ঢাকার নর্দ্দা এলাকা থেকে আল ফাহাদ (১৯)’কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন অপরাধীরা ভার্চুয়াল জগতের অপব্যবহার করে কলুষিত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। এক শ্রেণীর ভার্চুয়াল প্রতারকদের দ্বারা নারীরা বিভিন্নভাবে হেনস্তা, প্রতারণা ও ব্যালকমেইলিং এর ফাঁদে পড়েছে। বেশ কয়েকজন ভ‚ক্তভোগী বিষয়টি রিপোর্ট টু র‌্যাব ও র‌্যাবের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবহিত করে। অনলাইনের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে বেশ কয়েকজন ভিকটিম র‌্যাব এর নিকট অভিযোগ দায়ের করেন। উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে র‌্যাব এই প্রতারণার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডিএমপির গুলশান থানাধীন নর্দ্দা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ভার্চুয়াল মেডিকেল স্ক্যানিং এর নামে গোপন ভিডিও চিত্র ধারণ করে ব্যালকমেইলিং এর অপরাধে প্রতারক আল ফাহাদ (১৯), পিতা-মোঃ রুবেল মিয়া, থানা-বন্দর, জেলা-নারায়নগঞ্জ’কে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতের নিকট হতে উদ্ধার করা হয় ০১টি ক্যামেরা, ০২টি ক্যামেরার লেন্স ও ০১টি মোবাইল ফোন, ০৬টি সীমকার্ড, ০১টি এক্সটার্নাল মেমোরী কার্ড ও ৪০৩ পিস ইয়াবা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত ফাহাদ অসংখ্য নারীর সাথে প্রতারণার বিষয়ে স্বীকারোক্তি প্রদান করে।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত জানায় যে, সে ইন্টারনেট ব্যবহার করে স্যোসাল মিডিয়ার বিভিন্ন সাইটে দেশী বিদেশী ও আন্তর্জাতিক সংস্থায় উচ্চ বেতনের চাকুরীর প্রলোভন দেখাত। ফলে অনেকেই তার সাথে যোগাযোগ করত। চাকুরী প্রার্থী প্রতি জনের নিকট হতে সে ৩৫০-৫০০/- টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি নিত যাতে অধিক সংখ্যক গ্রাহককে আকৃষ্ট করা যায়। অন্যদিকে টাকার পরিমান স্বল্প হওয়ায় ভিকটিমরা চাপ প্রয়োগ করবে না বলে সেই ধারণার বশবর্তী হয়ে সে বর্ণিত কাজে যুক্ত হয়। গ্রেফতারকৃত মোবাইলে বিশেষ অ্যাপস এর মাধ্যমে নারী কণ্ঠে চাকুরী প্রার্থীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করত। সে বিভিন্ন কৌশলে প্রার্থীদের করোনাকালীন সময়ে ভার্চুয়াল মেডিকেল করা হবে বলে জানাত। এভাবে প্রার্থীরা বিভিন্ন সামাজিক চ্যাটিং অ্যাপস এর মাধ্যমে ভিডিও কলে যুক্ত হত। গ্রেফতারকৃত নিজের মোবাইলের ক্যামেরা বন্ধ রেখে ভিডিও কলে মেডিকেল পরীক্ষা নেওয়ার নামে বিভিন্ন কৌশলে ভিকটিমদের গোপন ভিডিও ধারণ করত। পরবর্তীতে ভিকটিমদের ঐসব গোপন ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করার ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা দাবী করত। এভাবে সে শতাধিক নারীদের ব্যালকমেইল করেছে বলে জানায়। এককালীন নয়, প্রায়শঃ বিভিন্ন ভিকটিমকে তাদের গোপন ভিডিও/ছবি পাঠিয়ে জন প্রতি ২-৫ হাজার টাকা নিত। এভাবে সে বিগত দেড় বছর যাবত শতাধিক নারীদের গোপন ভিডিও থেকে নিয়মিত ব্যালকমেইলিং করত।

গ্রেফতারকৃত ফাহাদ নারায়ণগঞ্জ এর একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করে এবং লেখাপড়া ছেড়ে দেয়। পরবর্তীতে সে তার পিতার সাথে রেল স্টেশনের পাশে ছোট একটি দোকানে ফল বিক্রি করত। ফল বিক্রির আড়ালে সে সোস্যাল মিডিয়ায় ‘ঙহষরহব ঔড়ন ইউ’, ‘চধৎঃ ঞরসব ঔড়নং রহ উযধশধ’ এবং ‘চধৎঃ ঞরসব ঔড়নং রহ ইধহমষধফবংয’ নামক গ্রুপে সদস্য হিসেবে যোগ দেয়। পরবর্তীতে ঐসকল গ্রুপে দেশী/বিদেশী কোম্পানীতে বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে চাকুরী দেয়ার নামে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা করত। প্রতারণা ও ব্যালকমেইলিং এর কাজে সে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে বেশ কিছু ভূয়া আইডি ব্যবহার করত।

গ্রেফতারকৃত আরও জানায় যে, চাকুরীতে নিয়োগের ক্ষেত্রে যে সকল ধাপগুলো প্রাথমিকভাবে অতিক্রম করতে হয় সে সকল ধাপগুলো সে নিজেই বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে ভয়েজ পরিবর্তন করে ভিকটিমদের সাথে কথা বলে ভূয়া নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করত। এক্ষেত্রে সে বিভিন্ন মেয়ের নাম ধারণ করে ভিকটিমদের নিকট প্রথমে নিজেকে দেশী/বিদেশী বিভিন্ন ভুয়া প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পদে কর্মরত বলে পরিচয় দিত এবং সে নিজেও একই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঐ চাকুরীতে যোগদান করেছে বলে জানাত। পরবর্তীতে সে নিজেই ঐ কোম্পানীর এডমিন অফিসার হিসেবে বিভিন্ন নামে পরিচয় দিত এবং ভিকটিমদের ইন্টারভিউ নিত। পুনরায় ঐ অ্যাপস এর মাধ্যমে ভয়েজ পরিবর্তন করে নিজেই মেডিকেল অফিসার হিসেবে ভিকটিমদের ভার্চুয়াল মেডিকেল করানোর নামে ভিডিও করত। যেহেতু করোনাকালীন সময়ে হাসপাতালে গিয়ে মেডিকেল করা সহজতর ছিলো না সেক্ষেত্রে গ্রেফতারকৃত এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কৌশলে ভিডিও ধারণ করে ভিকটিমদের ব্যালকমেইলিং করত।

গ্রেফতারকৃতের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।