কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে আ.লীগ প্রার্থীর মনোনয়ন নিয়ে মন্তব্য করায় ৩ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা

অপরাধ

বিশেষ প্রতিবেদক :
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর ৬০ কোটি টাকায় মনোনয়ন ক্রয় করেছেন, টক-শোতে এমন বক্তব্য দেওয়ায় জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) সভাপতি নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, বিএনপি নেতা মনিরুল হক চৌধুরীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

আজ বুধবার (১ জুন) চট্টগ্রামের সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক জহিরুল কবিরের আদালতে মামলাটি দায়ের করেছেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক আবদুল্লা আল মাহমুদ সহিদ। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫/২৯/৩১ ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীর আইনজীবী ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী। তিনি বলেন, আদালত মামলাটি গ্রহণ করে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন। মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ জুলাই।
মামলার অপর আসামি হলেন টেবিল টক ইউকের সঞ্চালক হাসিনা আক্তার।

আদালতে করা মামলার আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৩ মে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী মনোনয়ন বোর্ডের সভার সিদ্ধান্তে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে আসন্ন নির্বাচনে মেয়র পদে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাতকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়। আরফানুল হক রিফাতের দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে বিএনপি-জামায়াতের আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতায় লন্ডন থেকে পরিচালিত ইউটিউব চ্যানেল টেবিল টক ইউকের মাধ্যমে গত ১৯ এপ্রিল একটি টক শো প্রচারিত হয়। টকশোতে মামলার বাদী এবং কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদ প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত বিষোদগার এবং মিথ্যা বানোয়াট অপপ্রচার শুরু করে। এর মধ্যে ১ নং আসামি অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ ওই টকশোতে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের নমিনেশন এনসিও করতে ১৩ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। পরে শুনলাম যে এটা বেড়ে ২০ কোটি টাকায় গেছে। পরে যে হইচইটা হলো এই টাকার পরিমাণটা গিয়ে দাঁড়িয়েছে নাকি ৬০ কোটি টাকা। তারা টক-শোতে মানহানীকর বক্তব্য দেন। এছাড়া টক-শোতে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট তথ্য উপস্থাপন করে তিনি বাদীর সম্মানহানী করেছেন।

১ নং আসামি অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লা কোনো ধরনের তথ্য প্রমাণ ছাড়া সামাজিক গণ-মাধ্যমে এ জাতীয় মিথ্যা, বানোয়াট, মানহানীকর বক্তব্য উপস্থাপন করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ অস্থিতিশীল করার নীল-নকশায় জড়িত হয়েছেন। তার এ ধরনের বক্তব্যে আমার ব্যক্তিগত, পারিবারিক, রাজনৈতিক সম্মানহানী ঘটানো হয়েছে। ওই বক্তব্যের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের অন্যান্য সদস্যদের সম্মানহানী করা হয়েছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের পারিবারিক ও রাজনৈতিক সম্মানহানী ঘটানো হয়েছে।

মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, একই টক-শোতে ২ নং আসামি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মো. মনিরুল হক চৌধুরী পরিকল্পিতভাবে ১ নং আসামি অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর মিথ্যা বানোয়াট উক্তিকে সমর্থন করে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের সম্মানহানী করেছেন। এছাড়া ৩ নং আসামি হাসিনা আক্তার ওই টকশো-তে “৬০ কোটি টাকা দিয়ে নমিনেশন ক্রয় করেছে গডফাদার রিফাত” শিরোনামে সংবাদ সামাজিক গণমাধ্যমে প্রচার করে বাদী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের সম্মানিত অন্যান্য সদস্যদের সম্মানহানী করেছেন।

আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে সামাজিক গণ-মাধ্যম ব্যবহার করে ওই টকশো অনুষ্ঠানে মানহানীকর বক্তব্য প্রচার করে আসন্ন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ অস্থিতিশীল করার ঘৃণ্য চেষ্টায় লিপ্ত হয়ে গভীর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.