কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে নির্যাতন ও যৌতুক দাবির অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে স্ত্রীর মামলা

অপরাধ

বিশেষ প্রতিবেদক :
কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার ৯ নং উত্তর হাওলা ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান হিরণের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন ও যৌতুক দাবির অভিযোগে মামলা করেছেন তার স্ত্রী সেলিনা আক্তার মুক্তা। রবিবার (১০ এপ্রিল) কুমিল্লার নারী শিশু নির্যাতন ট্রাইবুনালের এ মামলা দায়ের করেন। মামলা নং –
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০(সং/৩)এর ১১(গ) /৩০ ধারা।
আবদুল হান্নান হিরণ কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার ৯নং উত্তর হাওলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও হাতীমারা গ্রামের মৃত আবদুল গফুরের ছেলে। সেলিনা আক্তার মুক্তা ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ মিয়ার মেয়ে।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, বাদীর পিতা রেলওয়ে চাকরির সুবাদে দীর্ঘদিন লাকসাম জংশন রেলওয়ে কোয়ার্টার থাকার কারণে হিরণের সাথে প্রেম ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হলে ২০০২ সালে ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে হিরণ ও মুক্তার পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে ২ ভরি স্বর্ণালংকার ও প্রায় ২০ লাখ টাকা বাবার বাড়ি থেকে নিয়ে স্বামীকে দেন সেলিনা আক্তার মুক্তা। দাম্পত্য জীবন কিছুদিন সুখে কাটলেও সে সুখ বেশিদিন স্হায়ী হয়নি। হিরণের নিদিষ্ট কোন চাকুরী ও ব্যবসা না থাকায় প্রথমে ইতালির জন্য টাকা দেয় মুক্তার পরিবার কিন্তু ইতালি যায়নি। পুনরায় দুবাই যাওয়ার জন্য টাকা দেয় দুবাই গিয়ে দু’বছর থেকে আবার দেশে এসে জড়িয়ে পড়ে মাদক সেবন ও মাদক ব্যবসার সাথে। হিরণ প্রায়ই নেশা করে বাড়ি ফিরতেন।এ নিয়ে মিডিয়াতে একাধিক সংবাদ ও প্রকাশিত হয়। গত কিছুদিন পূর্বে কুমিল্লার ডিবি পুলিশ মাদক সহ চেয়ারম্যানের হিরণের গাড়ি আটক করে।
মাদক থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য মুক্তা অনেক চেষ্টা করে এজন্য তাকে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। ২০১০ সালে প্রথম ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর হিরণ আর-ও বেপরোয়া হয়ে উঠে। মাদকের সাথে পরকিয়ায় প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে সংসারে বিরোধ দেখা দেয় ও বাধা দিলে স্ত্রীর ওপর নির্যাতন করেন তিনি। ২০১৭ সালে মুক্তা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। সংসার টিকানোর জন্য সকল নির্যাতন মুখ বুজে সহ্য করেন তিনি। ২০২২ সালে আবারও চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয় আবদুল হান্নান হিরণ। নির্বাচনী ধার দেনা পরিশোধ করতে বাবার কাছ থেকে যৌতুকের টাকা আনার জন্য নানাভাবে চাপ দিতে থাকেন। যৌতুক না পাওয়ায় তাকে প্রায়ই নির্যাতন করা হতো।
কয়েকদিন আগে বাবার বাড়ি থেকে ২০ লাখ টাকা এনে দিতে তিনি স্ত্রীকে চাপ দেন। দাবি করা টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তিনি স্ত্রীকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। গলা চেপে ধরে মেরে ফেলতে চায়। এতে তার শরীরের বিভিন্ন অংশে জখম হয়। পরে আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে তার বড় ভাই এসে তাকে লাকসাম কর্নিয়া হেলথ সেন্টারে চিকিৎসা করান।

বাদী পক্ষের আইনজীবী মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে পেটানোর ঘটনায় আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে। বিচারক বাদীর বক্তব্য শুনে মামলাটি আমলে নিয়েছেন। অভিযোগটি তদন্ত করে নারী শিশু নির্যাতন ট্রাইবুনাল তদন্ত সেল থেকে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.