আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন : কিছু প্রাসঙ্গীক ভাবনা

অন্যান্য

জি এম জাহিদ হোসেন টিপু :
স্থানীয় সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন অংগ ইউনিয়ন পরিষদ। সরকার ইউনিয়ন পরিষদকে শক্তিশালী করার লক্ষে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করেছে। অতীতে সকল সময়ের তুলনায় বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ অনেক শক্তিশালী। তাই যত দিন যাচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদকে ঘিরে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে । সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে । নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নতুন কুড়মুড়ে পোষাক পরে নিজেকে উপস্থাপন করছে। ইতিমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের চলতি মেয়াদ শেষ হয়েছে। করোনার কারনে যথা সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারেনি ৷ নির্বাচন কমিশন ০৬ ধাপে নির্বাচন ঘোষণা দিয়ে ১ম ধাপে উপকুলীয় এলাকার ৩৬১ ইউনিয়নের মধ্যে ১৩১টি ইউনিয়নের নির্বাচন করোনার কারনে লকডাউনে স্থগিত হয়ে য়ায়। উক্ত ইউনিয়ন গুলোর নির্বাচন অনুষ্ঠানের ৪/৫ দিন আগে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায় তাই সাংবিধানিক বাধ্যবাদকতায় আগামী ২০শে সেপ্টেম্বর উক্ত ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। স্থানীয় সরকার আইনে বলা আছে পরিষদের মেয়াদ উর্ত্তীর্ণ হওয়ার ৩ মাস পূর্বে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে । কোন কারনে মেয়াদ শেষে নির্বাচন করা না গেলে পরবর্তী ৯০ দিন পর্যন্ত চলমান পরিষদ দায়িত্ব চালিয়ে যাবে। ৯০দিন পরও যদি কোন দৈব কারনে নির্বাচন করানো না য়ায় তাহলে সরকার একটি প্রজ্ঞাপন জারী করে পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া চলমান পরিষদ দায়িত্ব চালিয়ে যাবে। আইনের বাধ্যবাদকতায় ইতি মধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে ৷ এখনো সেই প্রজ্ঞাপন জারী বলবৎ আছে ৷ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার ছাড়া নির্বাচন কমিশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন আছে ৷ বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ আগামী ফেব্রুয়ারী মাসে শেষ হয়ে যাবে । আইন অনুযায়ী কমিশননের মেয়াদ শেষের ১ মাস পূর্ব থেকে কমিশন কোন নির্বাচন অনুষ্ঠিত করাতে পারবে না । তাই নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে ঘোষনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরের মধ্যে সকল মেয়াদ উত্তীর্ণ স্থানীয় সরকার নির্বাচন শেষ করতে চায়। এ ক্ষেত্রে সরকারের অনুমতি লাগতে পারে। যদি অবশিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করতে সরকারের অনুমতির প্রয়োজন হয় তাহলে সরকার এই মূহুর্তে নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনুমতি দিবে বলে মনে হয় না । কারন আগামী নভেম্বর মাসে ১১ তাং এস এস সি ও ডিসেম্বর মাসে এইচএসসি পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হবে । অতীতে কখনোই এসএস সি, এইচএসসি পরিক্ষার সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার নজীর নাই। ৷ উক্ত কারনে যদি নভেম্বর-ডিসেম্বরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন না হয় তাহলে ফেব্রুয়ারীতে নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত কোন নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা নাই। নতুন নির্বাচন কমিশন পরবর্তী নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিতে কয়েক মাস লেগে যেতে পারে । তাছাড়া এর মধ্যে করোনা প্রাদুর্ভাব যদি আবার বেড়ে যায় আবার লকডাউন দেয়া হতে পারে ৷ তাই আগামী ১ বছর নির্বাচন নাও হতে পারে । আর যদি আগামী ১ বছর নির্বাচন না হয় তাহলে সরকারের মেয়াদ ১ বছর থাকতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন দিতে সরকারের এমপি মন্ত্রীরা বিরোধীতা করতে পারে ৷ কারন বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যগন বিপাকে পড়তে পারেন , যা আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব পড়তে পারে ৷ কোন কারনে যদি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন না হয় তাহলে পরবর্তী উপজেলা নির্বাচনেরা আগে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হওয়ায় কোন সম্ভাবনা নাই । আর যদি তাই হয় তাহলে সকল সম্ভাব্য প্রার্থী হতাশায় নিমজ্জিত হবে ৷ উল্লেখ্য উপরোক্ত প্রাসঙ্গিক ভাবনা আমার একান্তই ব্যাক্তিগত ভাবনা । আমার ভাবনা যদি সঠিক হয় তাহলে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আগামী মে-জুন মাসে হতে পারে । আর করোনার প্রাদুর্ভাব এরই মধ্যে বাড়লে আগামী উপজেলা নির্বাচনের পরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা আছে । আর আমার ভাবনা যদি সঠিক না হয় তাহলে ডিসেম্বরের মধ্যেই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা আছে যদি সরকার চায়। কারন সরকারের কাছে বর্তমানে প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করতে শত শত কোটি টাকা অপচয় না করে শত শত কোটি টাকায় করোনা টিকা ক্রয় করে স্কুল , কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সচল করা আর ব্যবসা বানিজ্যের পরিবেশ স্বাভাবিক করে অর্থনীতির চাকা সচল রাখা । কোনটা বেশী সরকারের কাছে জরুরী সিদ্ধান্ত নিবে সরকার ৷ এখন শুধু অপেক্ষা ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published.