Doinik Bangla Khobor

অসহায় গরীব বলে চরফ্যাশনে প্রতিবন্ধী গৃহবধূর যৌন নিপীড়নের মামলা নেননি ওসি হারুন

লামিয়া ভোলা থেকে :
ভোলার চরফ্যাশনে প্রতিবন্ধী গৃহবধূকে যৌন নিপীড়নের মামলা না নিয়ে সমঝোতা করতে ভিকটিম পরিবারকে চাপ দিচ্ছেন দক্ষিণ আইচা থানার ওসি (অফিসার ইনচার্জ) হারুন অর রশিদ। ডিআইজি পদমর্যাদার সমকক্ষ পদস্থ কর্মকর্তার নির্দেশ থাকায় তিনি (ওসি) মামলাটি নিতে পারবেন না বলে ভিকটিম পরিবারকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন এবং দাখিলকৃত এজাহারটি ফেরৎ দিয়েছেন। পুলিশের এমন বক্তব্য শুনার পাশাপাশি আসামী পক্ষের হুমকী ধামকীতে ভিকটিম পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। ভিকটিমের বাবা গতকাল সোমবার এই অভিযোগ করেছেন।
চরফ্যাশনে দক্ষিণ আইচা থানার নজরুলনগর ইউনিয়নের চর আর কলমী গ্রামের বজলু বাজার এলাকার শারীরিক প্রতিবন্ধী গৃহবধূকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে দুলাল হোসেন নামের এক প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে। গত ২ এপ্রিল শুক্রবার বিকেলে অভিযুক্ত দুলালের বাড়ির পাশের খালপাড়ের রাস্তা দিয়ে নিজবাড়ি ফেরার পথে প্রতিবেশী শামসুদ্দিনের ছেলে অভিযুক্ত দুলাল প্রতিবন্ধী গৃহবধূকে ঝাপটে ধরে যৌন-নিপীড়ন করেন। গৃহবধূ বাধা দিলে দুলাল তাকে মারধর করেন। মারধরে আহত প্রতিবন্ধী গৃহবধূ দুলালের বাড়ি গিয়ে ঘটনাটি জানালে দুলালের বাবা শামসুদ্দিন, ভাই ইমন ও মা নাজমা মিলে প্রতিবন্ধী গৃহবধূকে বাড়ির উঠানে ফেলে দ্বিতীয় দফায় মারধর করেন। মারধরে আহত প্রতিবন্ধী গৃহবধূকে তার স্বজনরা উদ্ধার করে শুক্রবার রাতে চরফ্যাশনে হাসপাতাালে ভর্তি করেন।
ভিকটিম গৃহবধুর বাবা জানান, দুই দফার মারধরে গুরুতর আহত মেয়েকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য চরফ্যাশন হাসপাতালে আনার পর দুলাল হোসেন দলবল নিয়ে হাসপাতাল চত্বরে তাকেও (ভিকটিমের বাবা) মারধর করেন। এই ঘটনার শুক্রবার রাতেই ভিকটিম বাদী হয়ে দুলাল হোসেন, তার বাবা শামসুদ্দিন, মা নাজমা ও ভাই ইমনকে আসামী করে দক্ষিণ আইচা থানায় এজাহার দাখিল করেন। ঘটনার দু’দিন পর রোববার দুপুরে অফিসার ইন চার্জ (ওসি) হারুন অর রশিদ ও ওসি (তদন্ত) মিলন কুমার ঘোষ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন কালে ভিকটিমের পরিবারকে বিকেলে থানায় যাওয়ার নির্দেশ দেন ওসি। রাতে (রোববার) ভিকটিমের বাবাসহ স্বজনেরা থানায় গেলে পুলিশ গভীর রাত পর্যন্ত তাদের থানায় বসিয়ে রাখেন। গভীর রাতে ওসি হারুন অর রশিদ ভিকটিমের বাবাকে মামলা না করে বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় নিম্পত্তির প্রস্তাব দেন। ভিকটিমের পরিবার এই প্রস্তাবে রাজি না হলে ওসি জানান, মামলা না নেয়ার জন্য ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তার নির্দেশ আছে। এই নির্দেশ উপেক্ষা করে আমি (ওসি) মামলা নিতে পারছিনা। অভিযুক্ত দুলাল ইতিপূর্বেও প্রতিবন্ধী এই ভিকটিমের কুৃ-প্রস্তাব ও যৌন-নিপীড়ন করেন এবং গ্রামে সালিশ বিচারের মাধ্যমে সেই অভিযোগ নিম্পত্তি করা হয়েছিল বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছেন। অভিযুক্ত দুলাল হোসেন জানান, যৌন নিপীড়নের বিষয়টি সঠিক নয়। তারা (ভিকটিম পরিবার) আমার পরিবার ও আমাকে হয়রানীর করার জন্য অহেতুক অভিযোগ তুলেছে। উল্টো আমার পরিবারের লোকজনকে মারধর করেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে কর্মরত দুলাল হোসেন সম্প্রতি ছুটিতে বাড়িতে অবস্থান করছেন। ছুটিতে বাড়িতে এসেই সে বিজিবিতে কর্মরত থাকার প্রভাব খাটিয়ে এমন অনেক অপকর্মের শামিল হয়েছেন। ভিকটিম পরিবারের অভিযোগ দায়েরের পর দক্ষিণ আইচা থানার ওসি হারুন অর রশিদকে একাধিকবার অফিসিয়াল নম্বরে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেনি।
ওসি হারুন অর রশিদ ফোন রিসিভ না করায় সহকরী পুলিশ সুপার (চরফ্যাশন-সার্কেল) শেখ সাব্বির হোসেন সাথে মুঠো ফোনে অভিযোগ প্রসংঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনিও ফোন রিসিভ না করে বার বার কেটে দিয়েছেন। তার অফিসে গিয়ে ও তাকে পাওয়া যায়নি। বিষয়টি সঠিক তদন্ত করে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য সারা বাংলাদেশের সাংবাদিকদের সহযোগিতা সহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।